স্থাপনা নেই, তবু স্থাপনা দেখিয়ে সরকারের অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাভারের গণপূর্ত বিভাগের (পিডব্লিউডি) কর্মকর্তা। কারসাজির মাধ্যমে নিয়েছেন নিজের নামে জমি। টাকার বিনিময়ে অধিগ্রহণকৃত স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আশুলিয়ার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের-এর ভূমি অধিগ্রহণ এলাকার স্থাপনা দাম নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা পিডব্লিউডি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কয়েকজন মিলে মার্কেটের দোকানকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল শেড দেখিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
সাভারের বাইপাইল মৌজার, আরএস দাগ নং ২১২-এ যৌথ তদন্তে রেকর্ডে নাল ভূমি দেখানো হয়েছে। বিবরণে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্টিলের কলামসহ স্টিলের দোতলা শেড ১৭৬ ফুটসহ ৭ জনের নামে থাকা বাড়িটি মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৩ টাকা। স্থানীয়রা জানান ওই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কখনো কোনো কারখানা বা ইন্ডাস্ট্রিই ছিল না।
এছাড়া অর্থের বিনিময়ে জমির পরিমাণ কম থাকার পরও বেশি দেখানো। অস্তিত্বহীন স্থাপনাও কোটি টাকা বরাদ্দ দেখিয়ে তিনি সরকারের অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলেন অভিযুক্ত পিডব্লিউডি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অধিগ্রহণ করা স্থাপনার দাম নির্ধারণ করে দেয়া আমাদের কাজ। এ কাজ আমি একা করি না, এখানে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ১৭ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা তো দেখেছেন, যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তারা অবশ্যই এটা দেখেছেন। না দেখে না বুঝে তো তারা স্বাক্ষর করেননি। তা ছাড়া অধিগ্রহণের আগে এ স্থাপনার ভিডিও করা হয়েছে। সেখানে তা পরিষ্কার যে স্থাপনা ছিল।
গেল জুন মাসে আপনি জমির মালিক হয়েছেন, এটা আইন অনুযায়ী যথাযথ হয়েছে কিনা এমন জিজ্ঞাসায় মিজানুর রহমান প্রতিবেদন না করার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি তিনি খোকা নামে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের কথিত সাংবাদিকের মোবাইল ফোনে ধরিয়ে দেন। তিনি নিউজ না করার অনুরোধ করেন।
এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিঃজেলা প্রশাসক (এল,এ) শাখা-৩ (ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেস) এলএ কেই-৩ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম শুরুতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও অজ্ঞাত বড় ভাই অনুমতি দিলে তিনি কথা বলবেন বলে জানান। পরে মুঠোফোনে সাইফুল জানান, শেড নির্মাণে তার প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন তারা আমার সঙ্গে কোনো প্রকার আলাপ না করে বাড়ির মালিকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। চুক্তির কাগজপত্র দেখালে একপর্যায়ে পিডব্লিউডি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান এক কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছে। তবে কিছু শর্ত দেন। কি শর্ত দিয়েছেন জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান সাইফুল ইসলাম।
এ বিষয়ে পিডব্লিউডি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তারা প্রায় ৮ কোটি টাকা চেয়েছে তবে আমরা দুই কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছি। অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী স্থাপনার দ্বিগুণ দাম দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে তারা আরও বেশি দাবি করছেন। এটা নিয়ে আমি তো একা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অধিগ্রহণের সময় তিনি ইচ্ছামতো স্থাপনার দাম নির্ধারণ করেছেন। এক্ষেত্রে তার হয়ে প্রস্তাব দেন স্থানীয় খোকা, মোসলেম মৃধা, আশরাফুল আলম, মো. জাহিদসহ আরও অজ্ঞাত কয়েকজন স্থানীয় ও ঢাকার দালাল চক্র। তাদের দেয়া অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে দাম কমিয়ে দেয়া আর প্রস্তাবে রাজি হলে দাম বাড়িয়ে দেখানোই ছিল মিজানুর রহমান গংদের কাজ। যার মাধ্যমে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা মিজানুর বাহিনী আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
জানা যায়, মার্কেট অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখনো সেখানে থাকা জমি ও দোকান মালিকদের অনেকেই টাকা বুঝে পাননি। বিষয়টি নিয়ে মার্কেট সভাপতি মো. আওলাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। একপর্যায়ে তিনি মিজানুর বাহিনীর সদস্য খোকাকে কল ধরিয়ে দিয়ে বলেন, উনি আমাদের মার্কেটের দায়িত্বে আছেন তার সঙ্গে কথা বলেন। অনেক অনুরোধ করা হলেও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এলএ কেই-৩ এর শুনানি চলমান রয়েছে। সবশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ নিয়ে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা জমির প্রকৃত মালিক ছাড়া কারো সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
নয়া শতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ