রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নিহত নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নাম নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। একারণে মরদেহ এখনো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম জানা যায় বৃষ্টি খাতুন।
জানা যায়, সাংবাদিক ‘অভিশ্রুতি শাস্ত্রী’ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম পরিবর্তন করার আবেদন করেছিলেন। যেখানে তার ধর্মীয় পরিচয় (ইসলাম ধর্ম) পরিবর্তন করতে চাননি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালে তিনি নিজের নাম, পিতার নাম ও বয়স কমানোর আবেদন করেছিলেন। তবে ধর্ম ইসলাম পরিবর্তনের আবেদন করেননি।
আবেদন অনুযায়ী, এনআইডিতে বৃষ্টি খাতুন হতে চেয়েছিলেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী, যে নাম নিয়েই এখন জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া বয়স ১৯৯৮ সালের ৯ মার্চের বদলে চেয়েছিলেন ২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর। আর পিতার নাম সবুজ শেখ পরিবর্তন করে মো. শাবরুল আলম চেয়েছিলেন (তার পিতার পূর্ণ নাম মো. শাবরুল আলম সবুজ)। তবে তার আবেদনটি অনুমোদন হয়নি।
অভিশ্রুতি তার আবেদনের সঙ্গে প্রমাণপত্র হিসেবে দাখিল করেছিলেন ২০২২ সালে করা জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা ও মাতার এনআইডির কপি ও ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব সনদ।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের আগুনে নিহত হন অভিশ্রুতি। তার নাম, পরিচিতি ও জীবনাচরণের কারণে ধর্ম নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তার মরদেহ এখনও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। জানা গেছে, ডিএনএ টেস্টের পর আদালতের মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হবে।
এদিকে ওই নারী সাংবাদিকের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকশায় চলছে শোকের মাতম। তার মা, বাবা, বোন, পাড়া প্রতিবেশি এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বলছেন বৃষ্টি সবুজ শেখের মেয়ে। সবুজ শেখ বলেন, ব্ল্যাড টেস্ট করা হবে যদি সত্য না হয়, আমি আইনের আশ্রয় নেব। এক নারী প্রতিবেশী বলেন, এই ছবি বৃষ্টির। আমি এই বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর থেকেই তাকে দেখছি। ও সবুজ চাচারই মেয়ে। প্রমাণ হিসেবে দেখান স্কুল কলেজ ও স্কুল-কলেজের সার্টিফিকেট। তার ছোট বোনের প্রশ্ন, কেন তার বোনকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। অবিলম্বে তার বোনকে ফেরৎ চান ওই সাংবাদিকের ছোট বোন।
তবে ভিন্ন দাবি করেছেন রমনার কালি মন্দিরের সভাপতি উৎপল সহা। তিনি জানান, আমাদের সাথে তার মন্দিরের কানেকটিভিটি বা কাজের সম্পৃক্ততা ছিল। সবুজ শেখ মিথ্যা কথা বলছেন, অভিশ্রুতির প্রকৃত বাড়ি ভারতের বানারসে। গত আট মাস ধরে সে এই মন্দিরে অনেকটাই কানেকটেড।
তবে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনের কোনো পাসপোর্ট ছিল না বলে জানান তার বান্ধবী। তিনি বলেন, বৃষ্টির কোনো পাসপোর্ট ছিল না। তবে কীভাবে পাসপোর্ট করতে হবে সে বিষয়ে আমাদের একাধিকবার কথা হয়েছে।
বৃষ্টি ওরফে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে পড়ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে ওই নারী সাংবাদিকও ছিলেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ