ঢাকা, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ভবন ঘিরে হাহাকার

প্রকাশনার সময়: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৭:১৭ | আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৭:২৪

রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ। ৭ তলা এ ভবনে বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ আগুনে নিহত হন ৪৬ জন। এ ঘটনায় আহত হন আরও অন্তত ১২ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় ৭৫ জনকে। আলোচিত এ ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। গতকাল শনিবারও হতাহত ও উদ্ধার হওয়ায় অনেক পরিবারের সদস্যরা ভিড় জমাচ্ছেন এ ভবনের সামনে। তাদের চোখেমুখে এখনো আতঙ্কের ছাপ, হূদয়ে রয়েছে স্বজন হারানোর হাহাকার।

এদিকে এ ঘটনায় গতকালও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে সিআইডির ফরেনসিক টিম। ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধি দল এবং দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। এ সময় তারা এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি করেন বলে জানা গেছে। ওদিকে ৪৬ জন মৃত্যুর ঘটনায় অবহেলাজনিত হত্যার দায়ে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরও অনেকেই। অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল ও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ১১ জনের মধ্যে ৬ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বাকি ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চিকিৎসা চলছে। এ ৫ জনেরই শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় তারা এখনো শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। এছাড়া গতকাল বিকালে পর্যন্ত ৪৪ মরাদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে, সেটি সাততলা। ভবনের নিচতলায় চুমুক কফি শপ থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের খাবারের দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুন পুরো ভবনের ছড়িয়ে যায়। তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া ওপরের তলাগুলোতেও রয়েছে খাবারের দোকান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খাবারের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় হয়। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে খেতে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনটি প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি ক্রেনের সাহায্যে ভবনের সপ্তম তলা ও ছাদে আশ্রয় নেয়া ব্যক্তিদের নামিয়ে আনতে থাকেন তারা। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর রাত দুইটার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ৮ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে এবং ১৪ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে মন্ত্রী জানান।

এর আধা ঘণ্টা পর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে সাংবাদিকদের জানান, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালেও একজনের মরদেহ রয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। পরবর্তীতে মৃত্যু বেড়ে ৪৬ জনে ঠেকে। এরপর গত শুক্রবার ভোর ৫টা ৪১ মিনিটে মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়। হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।

গতকালও প্রকৌশলি দম্পত্তি ও তার সন্তানের লাশ হস্তান্তর করা হয়। শনিবার বেইলি রোডে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ভবনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বর্তমান পরিস্থিতি মানুষকে জানাতে সেখানে ভিড় জমিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। ভিড় জমিয়েছেন শতশত উৎসুক জনতাও। সবার আতঙ্কভরা চোখে আর্তনাদ স্পষ্ট। কারোর কণ্ঠস্বর কেঁপে উঠছিল ঘটনার কথা মনে করতেই। ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হাসিবুল আলম ইভান কোচিং শেষে পুড়ে যাওয়া ভবনটি দেখতে এসেছেন।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে এ ভবনে ফ্যামিলিসহ অনেকবার এসেছিলাম। আগুনে পুড়ে যাওয়া এ ভবন দেখে এখন আতঙ্ক লাগছে। এর আগে যখন এখানে এসেছিলাম, বহুবার দেখেছি সিলিন্ডারগুলো অসতর্কভাবে রাখা ছিল। সচেতনতা অবলম্বন করলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আমিন আলমগীর নামের একজন পথচারী বলেন, আমি প্রতিদিন এ ভবনের সামনে দিয়েই যাই। পুড়ে যাওয়ার পর ভবনটি দেখে ভয় লাগছে।

গ্রিন কোজি কটেজের পাশের ভবন গোল্ড প্যালেস। এ ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. মোস্তফা বলেন, এখানে (গ্রিন কোজি কটেজ) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ দেখতাম। কারণ খাবারের দোকান, মানুষ খাবার খেতে আসতো, খাবার নিয়েও যেত। যা এখন শুধুই স্মৃতি।

অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগে মামলা: রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেছে। পুলিশ জানায়, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে আগুনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। মামলা আসামি করা হয়েছে চুমুক কফি শপের মালিক আনোয়ারুল হক, স্বত্বাধীকারী আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ম্যানেজার হামিদুল আলম বিপুল ও কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের মালিক মো. সোহেল সিরাজকে।

এদিকে, শুক্রবার রাতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে বেইলি রোডের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্তে মিডিয়া ব্রিফিং করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, রাজধানীর বেইলি রোডে আগুন লাগা ভবনের নিচতলার চুমুক রেস্টুরেন্টের (ছোট রেস্টুরেন্ট) দুজন মালিক ও কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

মামলায় পুলিশের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিচতলায় দুটি খাবারের রেস্টুরেন্ট ছিল। পেছনের দিকে বড় এবং সামনের দিকে ছিল হালকা খাবার চা-কফির ছোট রেস্টুরেন্ট। ছোট রেস্টুরেন্ট থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। সেই ভিডিও ফুটেজও সবার কাছে রয়েছে। আগুনের ঘটনায় অবহেলাজনিতকারণে মৃত্যু অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবেন। ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন।

৪৪ মরদেহ হস্তান্তর, মর্গে পড়ে আছে দুই: বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪৪ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দুজনের মরদেহ এখনো পড়ে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে। ডিএনএ টেস্ট করে মরদেহ দুটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের অফিসার ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, দুজনের লাশ এখনো মর্গে আছে। ডিএনএ টেস্টের মধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে ৪০ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া শনিবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কাস্টমস কর্মকর্তা শাহ জালাল উদ্দিন (৩৫), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলার (৪) মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আহত ৬ জনকে ছাড়পত্র, ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক: বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় আহত ১১ জন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে গতকাল শনিবার হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়। ঢাকায় রেডিসন ব্লু হোটলে সায়েন্টিফিক সেমিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি বলেন, ১৭ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ১১ রোগীর মধ্যে ছয়জনকে রিলিজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর বাকি পাঁচজন শঙ্কামুক্ত না হওয়ায় তারা চিকিৎসাধীন থাকবেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে রোধে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে সজাগ হতে হবে। সামান্য একটা ভুলের জন্য ৪৬টা প্রাণ চলে গেল। এর চেয়ে মর্মান্তিক আর কিছু হতে পারে না। আমি আশা করি এর বিরুদ্ধে অভিযান চলা উচিত ও চলবে। সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনেকরি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান পৃথিবীর অন্য কোনো অংশের চিকিৎসকদের চেয়ে কম নয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সবই আছে। শুধু একটু সুযোগ দিতে হবে। সুযোগ দিলে এ দেশের চিকিৎসকরা অনেক দূর এগিয়ে যাবেন। সে সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমি দায়িত্বটা পেয়েছি এবং এ দায়িত্ব আমার।

৪২ জনের পরিচয় মিলেছে: বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পরিচয় মিলেছে ৪২ জনের। শুক্রবার ও শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তাদের মরদেহ শনাক্ত করেন স্বজনরা।

নিহতরা হলেন, রাজধানীর কাকরাইলের ফৌজিয়া আফরিন (২২) ও তার বোন সাদিয়া আফরিন, মালিবাগের পপি রায় (৩৬), পুরান ঢাকার সম্পনা পোদ্দার (১১), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশরাফুল ইসলাম (২৫), আরামবাগের নাজিয়া আক্তার (৩১) ও তার ছেলে আরাহাম মোস্তফা (৬), পুরান ঢাকার নুরুল ইসলাম (৩২), কুমিল্লার সম্পা সাহা (৪৬), নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেন (২৪), মতিঝিলের মায়শা কবির (২১) ও তার বোন মেহেরা কবির (২৯), ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক লুৎফুর নাহার করিম (৫০) ও তার মেয়ে জান্নাতিন তাজরী নিকিতা (২৩), মাদারীপুরের মোহাম্মদ জিহাদ (২২), যশোরের কামরুল হাসান (২০), ভোলা সদরের দিদারুল হক (২৩), মৌলভীবাজারের আতাউর রহমান (৬৫), টাঙ্গাইলের মেহেদী হাসান (২৭), কুমিল্লার নুসরাত জাহান (১৯), মুন্সীগঞ্জের জারিন তাসনিম (২০), ঢাকার বাড্ডার জুয়েল গাজী (৩০), মালিবাগের রুবি রায় (৪০) ও তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা রায় (১৮), খিলগাঁওয়ের তুষার হাওলাদার (২৩), বাসাবোর কে এম মিনহাজ উদ্দিন (২৫), পাবনার সাগর (২৪), পিরোজপুরের তানজিলা নওরিন (৩৫), শেরপুরের শিপন (২১), বরিশালের আলিসা (১৩), বুয়েটের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন (১৯) ও লামিসা ইসলাম (২০), বরগুনার মো. নাঈম (১৮), দ্য রিপোর্ট ডটকমের প্রতিবেদক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী (২৫), কক্সবাজারের শাহজালাল উদ্দিন (৩৪), তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা জাহান (২৪) ও তাদের সন্তান ফাইরুজ কাশেম জামিরা (৩)। এছাড়া আগুনে নিহত এক পরিবারের পাঁচজন হলেন সৈয়দ মোবারক কাউসার (৪৮), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৪০) এবং তাদের তিন সন্তান সৈয়দা ফাতেমা তুজ জোহরা (১৬), সৈয়দা আমেনা আক্তার (১৩) ও সৈয়দ আবদুল্লাহ (৮)। তারা ইতালিপ্রবাসী ছিলেন। বাংলাদেশে তারদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

যারা অনুমোদন দিয়েছেন তাদের দায় নেয়া উচিত: এফবিসিসিআই: রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় যদি কারও গাফিলতি থাকে, তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।

গতকাল শনিবার দুপুরে বেইলি রোডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শন করে এফবিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা তো অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করছে। সরকারের যে তদারকি সংস্থা আছে তারা কী করেছে? এখানে ফায়ার সার্ভিস, রাজউকসহ যে তদারকি সংস্থা আছে, তাদের কোনো গাফিলতি থাকলে বিচারের আওতায় আনা হোক। ব্যবসায়ীদের গাফিলতি থাকলে সেটিরও বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘যিনি বা যারা অনুমোদন দিয়েছেন, তাদের দায় নেয়া উচিত। কারণ তারাই তো সবকিছু দেখে অনুমোদন দিয়েছেন।’ আমিন হেলালি বলেন, যারা এসব ভবন নিয়ন্ত্রণ করবেন তারাই কিন্তু মূল অথরিটি। তাদের হাতে আইন আছে, আমাদের (ব্যবসায়ী) হাতে আইন নাই। আমরা শুধু পরামর্শ দিতে পারি এবং দিয়েছি।

কেন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেন না— প্রশ্ন দোকান মালিক সমিতির: নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে নোটিশ কোনো ব্যবস্থা নয়, বরং কেন সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি, এমন প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। গতকাল বেইলি রোডে পুড়ে যাওয়া ভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন প্রশ্ন তোলেন। হেলাল উদ্দিন বলেন, যারা রেগুলেটরি বোর্ডে আছে তাদের কোনো শাস্তি হয় না, তারা শুধু নোটিশ দেন। নোটিশ বড় কোনো ব্যবস্থা না, আপনারা কেন সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলেন না, সেটা হচ্ছে প্রশ্ন? যেসব রেগুলেটরি বোর্ড এ ভবনে ব্যবসার অনুমতি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিক। এ ধরনের ঘটনা আবার ঘটুক এটা আমরা চাই না। যার ত্রুটি থাকবে তার বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। সেটা যদি কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে হয় তবে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে, আর যদি কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে হয় তবে সেটা সংস্থার বিরুদ্ধে। আপনারা সবকিছু বাণিজ্যিকীকরণ করবেন আর সেটার মাধ্যমে মানুষের জীবন চলে যাবে, এটা হতে পারে না। যে রেগুলেটরি বোর্ডের সমস্যা, সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।

ভবনের ব্যবস্থাপকসহ চারজন ২ দিনের রিমান্ডে: রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ভবনটির ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলমসহ চারজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল শনিবার এ আদেশ দেন। রিমান্ডে নেয়া অপর তিনজন হলেন ভবনের চুমুক নামের রেস্তোরাঁর দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান এবং কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসান। তবে মামলার এজাহারে শফিকুরের নাম নেই।

পুলিশ ও আদালত সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপরদিকে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাদের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এবার গাউসুল আজম মার্কেটে আগুন: বেইলি রোডের রেশ না কাটতেই এবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার গাউসুল আজম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় একটি প্রিন্টারের দোকানে আগুন লেগেছে। পলাশী ব্যারাকের ফায়ার স্টেশনের দুই ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আধা ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জানান, নিউমার্কেট গাউসুল আজম মার্কেটের একটি দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

তবে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক এক লাখ টাকা বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের সাততলা ভবনে আগুন লাগে। ভবনের নিচতলায় চুমুক কফি শপ থেকে আগুনের সূত্রপাত।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ