বাড়ন্ত দ্রব্যমূল্যের বাজারে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে চেপেছে তিতাসের প্রিপেইড মিটার ভাড়া। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গোপনে গ্যাসের মিটার ভাড়া একলাফে করা হয়েছে দ্বিগুণ। মিটার ভাড়া কেন এত দিতে হবে এবং এত বাড়ানো হবে তা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ গ্রাহক। তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মিটার ভাড়া বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত জনজীবনে আরও বিপর্যয় ডেকে আনবে। বাড়তি এ খরচ সমন্বয় করতে হিমশিম খাবে নিম্নআয়ের মানুষ।
ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, জানুয়ারিতে হঠাৎ করেই তাদের কাছ থেকে ১০০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা মিটার ভাড়া আদায় করছে তিতাস। দোকানে কার্ড রিচার্জ করতে গেলে সেখানে জানুয়ারি মাসে ২০০ টাকা মিটার চার্জ কাটার বিষয়টি খেয়াল করেন তারা। দোকানিকে প্রশ্ন করলে তাদের অভিযোগের কোনো জবাব তিতাস দেয় না বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে আগে থেকে দেওয়া হয়নি কোনো আভাস কিংবা নোটিশ।
উল্লেখ্য, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের জাইকার অর্থায়নে দুটি প্রকল্পে মিটার স্থাপনের কাজ চলমান। জাইকার অর্থায়নে বসানো হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার এবং এডিবির অর্থায়নে ৮ হাজার ৬০০টি মিটার স্থাপন করা হয়েছে। জাইকার অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের আওতায় আরও ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের লক্ষ্যে একটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। জাইকার অর্থায়নে আরও ১১ লাখ মিটার স্থাপন প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে গ্রাহকদের কাছে তিতাসের ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬০০টি প্রিপেইড মিটার রয়েছে। এর আগে প্রতি মাসে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মিটার ভাড়া চার্জ হিসেবে আদায় করা হতো। নতুন নিয়মে গ্রাহকদের থেকে আরও সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে গ্রাহকের থেকে মিটার ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ৬ কোটি ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় হবে তিতাসের।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ‘২০০৩ এর ধারা ২২ (খ) এবং ৩৪ অনুসারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) ডিস্ট্রিবিউশন চার্জ ও ভোক্তাপর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে আগ্রহী পক্ষগণকে গণশুনানি প্রদানপূর্বক বিস্তারিত পর্যালোচনা করে আদেশ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।’ তবে মিটার ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কিছুই জানে না সংস্থাটি।
বিইআরসির সদস্য (গ্যাস) ড. মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তিতাস মিটার ভাড়া বাড়িয়েছে কি না আমাদের জানা নেই। আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তিতাসের এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তি ও ভয়ংকর বলে মনে করছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সংস্থাটির জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘গ্যাসের বিলের মধ্যেই মিটার চার্জ সমন্বয় করে নেওয়ার কথা। কিন্তু তিতাস আলাদাভাবে মিটার চার্জ নিচ্ছে। এটা নেওয়ার এখতিয়ার তিতাসের নেই। বিল বাড়ানোর কোনো এখতিয়ারও তিতাসের নেই।’ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। মন্ত্রণালয় থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোনে মন্তব্য করতে রাজি হননি এবং তিতাসের এমডির সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
নয়াশতাব্দী/আরজে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ