দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। ফলে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভোটের মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীও।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি সবাইকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি পরাভূত করে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালনে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
সিইসি বলেছেন, বিশৃঙ্খলা করলে বন্ধ হতে পারে ভোট, বাতিল হতে পারে প্রার্থিতা। সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এবার ভোটে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ৬৬ জন দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে দুইজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন জেলা প্রশাসক।
কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি সংসদীয় আসনে এক হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইসিতে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই নির্বাচনে ২৭টি রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন ৪৩৬ জন।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টির ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ১৩ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাচনে নারী প্রার্থী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৯০ জন। আর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অন্যান্য মিলে ৭৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
২৯৯ সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৪টি। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি। সর্বশেষ প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৮৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি ৭৬ লাখ নয় হাজার ৭৪১ ও নারী ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৮ হাজার ৬৯৯। এছাড়া সারাদেশে এবার তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন।
এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। শুধু দুর্গম অঞ্চলের দুই হাজার ৯৬৪টি কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানো হয়েছে ভোটের আগের দিন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন স্থানীয় ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষক। এছাড়া দুই শতাধিক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকছেন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই লাখ ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে চার লাখ ৭২ হাজার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৭ জনের নিরাপত্তা সদস্যের একটি দল মোতায়েন রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে অস্ত্রধারী দুজন পুলিশ, অস্ত্রধারী একজন আনসার, অস্ত্র বা লাঠিধারী একজন আনসার, ১০ জন আনসার, লাঠি হাতে একজন বা দুজন গ্রামপুলিশ সদস্যসহ ১৫ থেকে ১৬ জনের একটি দল সব সাধারণ ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় রয়েছেন। তবে, প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের ক্ষেত্রে অস্ত্রসহ ৩ জন পুলিশসহ ১৬ থেকে ১৭ জনের দল রয়েছে।
নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৫ জানুয়ারি মধ্যরাত ১২টা থেকে ৮ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে ইসির স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেল এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রয়েছে।
এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষ্যে ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিবসের পূর্ববর্তী মধ্যরাত অর্থাৎ ৬ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্যাক্সি ক্যাব, পিক আপ, মাইক্রোবাস ও ট্রাক।
উল্লেখ্য, প্রতি পাঁচ বছর পর দেশে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। ভোট মানেই উৎসব। জনগণ সুযোগ পান তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নেওয়ার। এবারের ভোটে উৎসব থাকলেও পাশাপাশি বিরাজ করছে শঙ্কার কালো মেঘও। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল নির্বাচনে আসেনি। ভোট বর্জন করে তারা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এতে দেশজুড়ে নাশকতার ঘটনায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে জনমনে। ভোট উৎসবে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ