ঢাকা, সোমবার, ৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬

আজ পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৬তম বর্ষপূর্তি

প্রকাশনার সময়: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৯

আজ ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের ২৬ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯৭ সালের এই দিনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এ ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন।

দেশের এক-দশমাংশ আয়তন জুড়ে তিনটি পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি । সেখানে উপজাতি জনগোষ্ঠী নিজ নিজ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির স্বকীয়তা বজায় রেখে দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ অঞ্চল স্বাধীনতা-পূর্বকালে ছিল পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে এ অঞ্চল উন্নয়নের গতি ধারায় যুক্ত হচ্ছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কুচক্রীদের হাতে বঙ্গবন্ধু স-পরিবারে নিহত হওয়ার পর ওই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। উন্নয়নের এ অচলাবস্থা পার্বত্য চট্টগ্রামের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে প্রায় দুই যুগব্যাপী স্থায়ী হয়।

১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা সাহসী উদ্যোগ গ্রহণ করে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সেখানকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি গঠিত হয়।

একই বছরের ডিসেম্বরে খাগড়াছড়ির সার্কিট হাউজে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও সরকারের মধ্যে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে সংবিধানের আওতায় এক কেন্দ্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই উপজাতীয় জনগণের ন্যায় সংগত দাবি পূরণের সম্ভাব্য সর্বোত্তম সমাধান খুঁজতে উভয়পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের গুণে ও প্রচেষ্টায় জাতীয় কমিটি ও জেএসএসের মধ্যে অনুষ্ঠিত সপ্তম বৈঠকে চূড়ান্ত সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রি সভার সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে জেএসএসের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেটাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বলা হয়ে থাকে। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই দীর্ঘ বিরাজ মান সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান ও শান্তি পূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান অর্জিত হয়। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দূর দৃষ্টি সম্পন্ন ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ফলে। এ ঐতিহাসিক মুহূর্তে উপস্থিত থেকে তা দেখার বিরল সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

এ অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিত থাকার স্মৃতি আজও মনে পড়ে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালের ৬ মে স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন সংশোধন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন সংসদে পাশ হয় এবং ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। কল্পরঞ্জন চাকমাকে মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। এবং জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা) নিয়োগ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে তিনজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে করে পার্বত্য এলাকার সার্বিক উন্নয়ন, বহুমুখী কল্যাণ ও সুষম উন্নয়নের সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৯ সালের মার্চে সরকার আমাকে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন করে।

পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং এর বাস্তবায়ন বিষয়ে পার্বত্যবাসীদের কারও কারও মধ্যে কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, পার্বত্য চুক্তির কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশের সংবিধানের আওতায় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অধিকার এবং জাতিসত্তাগত স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি জাতীয় মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এ অঞ্চলে বসবাসরত পাহাড়ি, বাঙালি নির্বিশেষে সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সমৃদ্ধ জনপদ গড়ার সম্ভাবনা দিন দিন বিকশিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ, বিচক্ষণ নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, তার সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা, সফল সংলাপ এবং শান্তি স্থাপনে উভয়পক্ষের সদিচ্ছার ফলেই সুদীর্ঘ সময়ব্যাপী চলমান এ জটিল সমস্যার সমাধানকল্পে এ ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়েছে। দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনা সরকারের এ উদ্যোগ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান এবং শান্তি স্থাপনের স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তির দূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মর্যাদাপূর্ণ বহু সম্মাননা লাভ করেছেন।

এদিকে আজ শনিবার স্থানীয় রাজার মাঠে পার্বত্য শান্তিচুক্তি ২৬তম বর্ষপৃতি উপলক্ষে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সারাদিন ব্যাপী সেনাবাহিনী ও পাবত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে র‌্যালী, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প শীত বন্ত্র বিতরন, মহিলাদের প্রীতি হ্যান্ডবল ও প্রীতি ফুটবল ম্যাচ প্রতিযোগিতা ও রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ