ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২৩ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালির বিজয়ের মাস ডিসেম্বর শুরু আজ। মুক্তিযুদ্ধে এ মাসের ১৬ তারিখ পাকহানাদার বাহিনীর কাছ থেকে চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। ৩০ লাখ শহিদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার স্বাক্ষর এবারের বিজয়ের মাস নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় আসে একাত্তরে ১৬ ডিসেম্বর। বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা।

ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এই দিনে। আবার এ মাসেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর আল-শামসদের সহযোগিতায় হানাদার গোষ্ঠী দেশের মেধাবী, শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। সমগ্র জাতিকে মেধাহীন করে দেয়ার এ ধরনের ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের দ্বিতীয় কোনো নজির বিশ্বে নেই।

ফলে এ বিজয় আনন্দ ও গৌরবের। একই সঙ্গে প্রিয়জন হারানো শোকের। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) স্বাধীনতার ডাক দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ঐতিহাসিক সেই ভাষণে উদ্দীপ্ত বাঙালি জাতি সেদিন স্বাধীনতা অর্জনের দৃঢ় শপথ নেয়। ২৫ মার্চের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তারা রুখে দাঁড়িয়েছিল শোষণের বিরুদ্ধে। ৩০ লাখ প্রাণ আর দুই লাখ বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয় বীর বাঙালি। একাত্তরে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন হলেও এ মাসের প্রতিটি দিনই ঘটনাবহুল।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বাঙালি বীর সন্তানদের সঙ্গে যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হতে থাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী। গেরিলা আক্রমণ আর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর জল, স্থল ও আকাশপথে সাঁড়াশি অভিযানের মুখে ক্রমাগত পরাজিত হতে থাকে তারা। হয়ে পড়ে দিশেহারা।

১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা আক্রমণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেনাবাহিনী আরও ভয়াবহভাবে নিরীহ জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পারে জিঞ্জিরায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একদিনেই ৮৭ জনকে হত্যা করা হয়। বাঙালির জন্মভূমি ত্রুমুক্ত করার লড়াইকে আড়ালে রাখতে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে বেতারে ঘোষণা দেন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু সেদিন তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই বাঙালিকে বিজয় অর্জন থেকে পিছিয়ে দিতে পারেনি। মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করতে তারা মরণপণ লড়াই চালিয়ে যান।

প্রাণ বাঁচাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বীর বাঙালির কাছে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকে। বাংলাদেশ দ্রুত মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে সেই রেসকোর্স ময়দানেই পাকিস্তানি বাহিনী নতিস্বীকারে বাধ্য হয়। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ বেয়ে আসে পরম কাঙ্ক্ষিত বিজয়।’ বাংলাদেশের এ সগৌরব অভ্যুদয় মানতে পারেনি অনেকেই। একাত্তরে যখন বাঙালি স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়ে লড়াই করছে, তখন কিছু মানুষ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে তাদের সহায়তা করেছে। এ স্বল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয়েছিল রাজাকার ও আলবদর বাহিনী।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ বাহিনীর সদস্যরা ত্রাসের সঞ্চার করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চিনত না। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। হত্যা করেছে দেশের সূর্যসন্তানদের। যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে, বাঙালির বিজয় যখন নিশ্চিত প্রায় তখন বেছে বেছে দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারলেও মেধাহীন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

এবারের বিজয় দিবস এমন এক সময় উদযাপন হতে যাচ্ছে যে সময় পুরো দেশ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উৎসব-প্রচার-প্রচারণা মেতেছে। নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যেও নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাড়ম্বরে পালিত হবে এবারের বিজয়ের মাস। মাসব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনায় এবং নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয়ের ৫৩ বছর উদযাপন করবেন দেশের মানুষ।

৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র জনগণের ওপর অতর্কিতে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর এক অসম যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাক বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতেই রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সশস্ত্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র জনযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মহান এ বিজয়ের মাস উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা দিবস পালন করবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন। এ উপলক্ষ্যে সকাল ৯টায় মিরপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহিদ ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

বেলা ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আজ বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের (পিজিডি) উদ্যোগে ঢাকাস্থ পিজিডি ভবনে ‘বিজয়ের ৫২ বছর: স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের’ আয়োজনে নগর কার্যালয়ে আগামী ৬ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এতে মূল আলোচক থাকবেন সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব। ১৪ ডিসেম্ব শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে সকালে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। ওইদিন ধানমন্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে বিকাল ৩টায় শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মরণে ‘রক্তঋণ ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর সকালে প্রত্যুষে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। একইদিন সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করা হবে। ১৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ