ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘অগ্নিপরীক্ষা’য় র‍্যাব-পুলিশ

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:১৬

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছেই। এরই মাঝে বিএনপি ও তার সহযোগী দলগুলো সারা দেশে জ্বালাও পোড়াও করেই যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচনের আগে তার মাত্রা আরও বাড়বে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে ও পরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। এ কারণে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগাম কিছু প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এরই মাঝে কোনো হুমকি নেই বলে জানানো হয়েছে। তারপরও আগামীতে তাদের অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হতে পারে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।

জানা গেছে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে রাজনৈতিক মহলে। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা। আবার কোনো কোনো স্থানে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকট আছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

সংঘর্ষের উত্তেজনা প্রায় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে। আর উত্তেজনা কমাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ অভিযান চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের। তারপরও জেলাগুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা পুলিশের। দুটি গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। তফসিলের আগে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত্র বৈঠকেও ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। ওইসব জেলায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও র‍্যাবকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলার পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও হামলা চালানোর আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, নাটোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় মুখোশধারীদের হামলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও রেঞ্জ ডিআইজিদের কার্যালয়ে বিশেষ বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে মুখোশধারীরা চিহ্নিত। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নির্দেশনা দিয়েছে, যারা এসব অপকর্ম করছে প্রমামসহ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে আরও অভিযান চালানো ও কঠোর নজরদারি করতেও বলা হয়েছে। নির্দেশনা পেয়ে জেলা পুলিশ তৎপর হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে। যেসব জেলা বা উপজেলা ঝুঁকিপূর্ণ আছে সেগুলো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, একাধিক জেলা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। এ নিয়ে আমরা সতর্ক। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্ততি নেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, অন্তত ৩৭টি জেলায় সরকারবিরোধীরা বিশৃঙ্খলা করার পাঁয়তারা করছে। তবে তাদের শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে। ইউনিটপ্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বিশেষ বার্তাও দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নাটোরসহ অন্তত দশটি জেলায় মুখোশ পরে হামলা চালানো হচ্ছে। এসব হামলা আমাদের ব্রিবত করছে। মুখোশধারীদের মধ্যে বেশির ভাগই চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলেও জেলার এসপিদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সামনের দিনগুলোতে জ্বালাও পোড়াওসহ সহিংসতার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। বিশেষ করে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা গোপন প্রতিবেদন দিয়ে সরকারকে আগাম সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। অন্তত ৩৭টি জেলায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওইসব জেলায় চোরাগোপ্তা হামলা হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে পারে। যারা সহিংসতা চালানোর পাঁয়তারা করছে ওইসব জেলায় তারা মজবুত। বিশেষ করে বিএনপির রাজনৈতিকভাবে শক্ত।

যেসব জেলা নিয়ে পুলিশের ভয় সেগুলো হচ্ছে— বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নাটোর, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, সিলেট, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ঝালকাঠি, লক্ষ্মীপুর, যশোর, নড়াইল, টাঙ্গাইল, পাবনা, ভোলা, নীলফামারী, সুনামগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলায় বাড়তি নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির চলমান অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচিতে জেলাগুলোতে সহিংসতা হওয়ার শঙ্কা আছে। একইভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগরীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং পুলিশের উপস্থিতি কম রয়েছে ও ঘটনাস্থল থেকেও দ্রুত সরে পড়া স্থানগুলোতে নাশকতার শঙ্কা করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিএনপির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্ব দিয়ে রাজপথে থেকে আন্দোলন সফল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি। বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে না করে বানচাল ও প্রতিহত করতে গিয়ে ব্যাপক সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। তারা হরতাল-অবরোধ দিয়ে আন্দোলনের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই, নির্বাচনি ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাঙচুর, রেল ও নৌপথে নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে। এবারও তারা আন্দোলনে সফল না হলে একই ধরনের পথ অবলম্বন করে দেশে সহিংস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা চালানোর পাঁয়তারা করছে।

বঙ্গভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবন, সচিবালয়, বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণকেন্দ্র, বিদেশি দূতাবাস, মন্ত্রীদের বাসভবন, সাবমেরিন ক্যাবলস, রেলস্টেশন, বাসডিপো, ফ্লাইওভার, নৌ-টার্মিনাল, পেট্রোল পাম্প, সিএনজি স্টেশন, সরকারি বা বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানোর আশঙ্কা রয়েছে। হামলাকারীরা চা, পান বিক্রেতা, আইসক্রিম বিক্রেতা বা অন্য যে কোনো হকারের ছদ্মবেশে যানবাহনে উঠে অগ্নিসংযোগসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রবেশ করে বোমা হামলা চালিয়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও করতে পারে বলে শঙ্কা করছে পুলিশ।

সার্বিক বিষয়ে জেলার কয়েকজন পুলিশ সুপার বলেন, নাটোরসহ অন্তত ১০টি জেলায় হেলমেট পড়ে হামলা চালিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের চিহ্নিত করা গেলেও বিশেষ কারণে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। তবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে তাদের বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, নাটোরে সবচেয়ে হামলা হয়েছে বেশি। যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারা বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি করেন বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, জেলাগুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সহিংসতা রোধে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। থানা পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ