ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিশুদের অপেক্ষার শেষ কবে!

প্রকাশনার সময়: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২২

যেখানে রোজ তৈরি হওয়ার কথা খুশির উপলক্ষ্য সেখানে তৈরি হয় হতাশার গল্প। শিশুদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় স্থান ছিল ঢাকার শাহবাগের শিশুপার্ক। পরিবার থেকে শুরু করে তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক, সব বয়সের মানুষ এই পার্কে আসত তাজা বাতাস এবং প্রাণবন্ত পরিবেশ উপভোগ করতে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর ধরে বন্ধ ঢাকার প্রথম সরকারি এ শিশুপার্কটি। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও উন্নয়নের জন্য এটি বন্ধ করা হলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। নতুন করে আবার যোগ হয়েছে প্রকল্প।

যে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আরও তিন বছর। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য শিশুপার্কটি ২০১৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে শিশু-কিশোরদের বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে বিনোদন থেকে। পার্কটি আবার কবে চালু হবে সে সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও স্পষ্ট তথ্য নেই। রাজধানীতে বিনোদনের জায়গা বলতে প্রথমেই যে নামটি ছিল সেটিই শাহবাগের শিশুপার্ক।

এখানে একটি শিশুপার্ক ছিল সেটাই অনেকে ভুলতে বসেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনো অনেকেই শিশু-কিশোরদের নিয়ে এসে দেখছেন পার্কের কোনো অস্বিত্ব নেই। ছুটির দিনগুলোতে ঢাকার বাইরে থেকে অনেকেই আসেন এখানে, কিন্তু ফিরে যান হতাশা নিয়ে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিশু পার্কটির বিভিন্ন রাইড ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, অনেক স্থাপনা ও রাইড পুরাতন হয়ে যাওয়ায় শিশুপার্কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অনুমোদন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই পার্কের আধুনিকায়নের কাজ শেষ করা হবে বলে জানান তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, শিশুপার্কটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে।

তখন পার্কের সামনে একটি বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে এটি বন্ধ ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শিশু পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এজন্য অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। শিশুপার্কের জায়গায় ২০১৯ সালের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। পার্কটি ডিএসসিসি পরিচালনা করলেও ভূগর্ভস্থ ৬০০ গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের অংশ হিসেবে।

নথিপত্রে এই কাজ ২০২৪ সালের শেষ দিকে সম্পন্ন হবে বলা হলেও তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নতুন নকশা অনুযায়ী শিশুপার্ক আগের মতো থাকছে না। যেখানে টিকিট কাউন্টার ছিল এর বরাবর একটি রাস্তা হবে। রাস্তার দুটি পথ দিয়ে যানবাহন বেসমেন্টে ঢুকবে। আগের কাউন্টারের স্থান থেকে রাস্তাটি সোজা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। রাস্তার দুই পাশে থাকবে পানির ফোয়ারা। টিকিট কাউন্টার হবে উদ্যানের ভিতরে পূর্বপাশে। দর্শনার্থীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশ দিয়ে উদ্যানে ঢুকে কিছুটা পশ্চিম দিকে হেঁটে শিশুপার্কের কাউন্টারে যাবেন।

শিশুপার্কে আধুনিক রাইড বসানোর জন্য ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ডিএসসিসির বোর্ড সভায় ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ৬০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার এই প্রকল্প সম্প্রতি একনেকে পাস হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের শুরু ২০২৩ সালের জুলাই এবং ২০২৬ সালের জুনে সমাপ্ত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে। তবে দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রকল্পটি শেষ করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগতে পারে। সেই হিসাবে ২০২৮ সালে কাজ শেষ হতে পারে। শিশুপার্ক আধুনিকায়নে মোট ১৫টি অত্যাধুনিক রাইড যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সুপার এয়ার রেস, টি কাপ ৯, ফ্লাইং ক্যাসেল, মিনি কোস্টার, বাম্পার কার, ম্যাজিক বাইক, সুপার হ্যাপি সুইং, মেরি-গো-রাউন্ড ও ওয়াটার মেনিয়া থাকছে।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুপার্কটি দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হলেও ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের আওতায় চলে যাওয়ায় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম প্রথমে পিডব্লিউডি (গণপূর্ত অধিদপ্তর) এবং পরবর্তীতে এখন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় তদারকি করছে।’

ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান দুটি সংরক্ষণে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের আওতায় আসছে শিশুপার্ক। এ সম্পর্কিত একটি মহাপরিকল্পনা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি তা অনুমোদন করেন। এক বছরেরও বেশি সময় পর প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী শিশুপার্কের এখনকার এন্ট্রি আর থাকবে না। স্বাধীনতা স্তম্ভ, শিখা চিরন্তন এবং শিশুপার্কের এন্ট্রি এক পয়েন্টে হবে। ঢুকলেই প্রথমে স্বাধীনতা স্তম্ভ চোখে পড়বে। এরপর অন্যান্য দিকে যাওয়া যাবে। এ ছাড়া শিশুপার্কে নতুন আরও ১১টি রাইড সংযুক্ত করা হবে বলেও জানা গেছে।

বর্তমানে বন্ধ রয়েছে শাহবাগ জাতীয় শিশুপার্ক। বন্ধের আগে গ্রীষ্মকালীন সময়ে শিশুপার্ক শনিবার থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এবং শীতকালীন সময়ে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া ২টা থেকে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকত। তবে বন্ধের দিনেও দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দরিদ্র, অসহায় ও পথশিশুদের জন্য খোলা থাকত। বর্তমানে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, শাহবাগে প্রায় ১৫ একর জমির উপরে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত করে পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে এই পার্কটি শিশুদের স্থান হিসেবে দায়িত্বে ছিল স্থানীয় সরকার প্রশাসন। পরবর্তীতে এটির রক্ষণাবেক্ষণ অর্থাৎ দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওপরে। ঢাকা সিটি করপোরেশন যখন দুই ভাগে বিভক্ত হয় তখন পার্কের দায়িত্ব পায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পটগুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুপার্ক, যা বাচ্চাদের খেলাধুলা এবং শেখার জন্য একটি নিরাপদ এবং মজাদার পরিবেশ কেন্দ্র। ছুটির দিনগুলোতে অনেকে আসেন আবার ফিরে যান হতাশা নিয়ে। নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ