ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বন্দির চাপে হিমশিম ৬৮ কারাগার

প্রকাশনার সময়: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৯ | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫১

দেশে বর্তমানে ৬৮ কারাগারে ধারণক্ষমতা মাত্র ৪৩ হাজার। কিন্তু সেখানে বন্দি রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার। এ কারণে দ্বিগুণ বন্দির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। এমন পরিস্থিতিতে আরও বন্দি রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, বর্তমান কারাগারে আটক বন্দিদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক নেতাকর্মী। তারা কারাগারে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও আড্ডাবাজি করে আসছে। এ কারণে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সার্বক্ষণিক কারা পোস্টগুলোতে বাড়ানো হয়েছে রক্ষীর সংখ্যাও। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই এ ব্যবস্থা বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি কারা কর্তৃপক্ষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন গত ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, তখন কারাগারে বন্দি ছিলেন ৭৭ হাজারের মতো। কারা অধিদপ্তরের হিসাবে, এখন বন্দির সংখ্যা ওই সময়ের চেয়ে ১২ হাজার ৬০৯ জন বেশি। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পর দলটির ১০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দির থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জায়গা থাকতে হয়। কারাগারে সেটা মানা সম্ভব হয় না। কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি রাখতে হয় বলে তারা কারাবিধি মানতে পারেন না। কারাগারে যথেষ্ট সংখ্যক কারারক্ষী না থাকায় শৃঙ্খলা রক্ষা করাও কঠিন। ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসক মাত্র ছয়জন। ফলে বন্দিদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। প্রভাবশালী বন্দিরা অবশ্য চিকিৎসার জন্য দিনের পর দিন হাসপাতালে থাকার সুযোগ পান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘৪২ হাজার বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা থাকলেও আমরা কারাগুলোতে ৯০ হাজার বন্দি রাখতে পারব। তাই আপাতত ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দরকার নেই। প্রয়োজন হলে আমরা পরে ব্যবস্থা নেব।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, নরসিংদী ও জামালপুরে কারাগার নির্মাণ অথবা সমপ্রসারণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন কারাগারগুলোর কাজ শেষ হলে বন্দি ধারণক্ষমতা বাড়বে।

জানা গেছে, দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার মিলিয়ে মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। আট বিভাগের মধ্যে বন্দি বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে। ধারণক্ষমতার তুলনায় চাপ সবচেয়ে বেশি রাজশাহীতে। ঢাকায় বন্দির সংখ্যা ৩০ হাজার ৮১১ জন। একজন বন্দি রাখার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৩ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে কারাগারে রয়েছেন ১৭ হাজার ২৩৫ জন। একজন বন্দির জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৭ জনকে। রাজশাহীতে একজন বন্দির জায়গার বিপরীতে থাকতে হচ্ছে সোয়া তিনজনকে। সেখানে মোট বন্দি ১৩ হাজার ৫৯৮ জন। দেশের শুধু একটি বিভাগে ধারণক্ষমতার তুলনায় বন্দি কম, সেটি সিলেট। খুলনা, ময়মনসিংহ ও বরিশালে ধারণক্ষমতার অনুপাতে বন্দির সংখ্যা ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মতো বেশি নয়।

কারা অধিদপ্তরের হিসাবে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) বন্দির ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দি ছিলেন ১০ হাজার ৮০৯ জন। গতকাল রোববার পর্যন্ত সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে অনেক বন্দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৯ দিনে আদালত থেকে ৩ হাজার ২৫০ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়। এদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক মামলার আসামি। তাদের আলাদা করে রাখার জায়গা না থাকায় পেশাদার অপরাধী ও জঙ্গিদের সঙ্গেই রাখা হচ্ছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ নয়া শতাব্দীকে বলেন, বিধি অনুযায়ী যে সংখ্যক বন্দি থাকার কথা, দাঁড়িয়েছে তার তিনগুণ। একজন বন্দির জন্য পর্যাপ্ত জায়গার দরকার হয়, যেহেতু তারা বন্দি অবস্থায় থাকেন। তিনি বলেন, কারারক্ষীর সংখ্যাও কম। এ কারণে বন্দি ব্যবস্থাপনা করা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও সামর্থ অনুযায়ী বন্দিদের ভালো রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারা অভ্যন্তরে বাড়ানো হয়েছে নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারিও। কোনো বন্দিকে ঝুঁকি মনে করলে তাকে কাশিমপুরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সূত্র মতে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা এবং অনেক নেতাকর্মী। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে। তিনি বলেন, বিএনপির যেসব নেতা এক সময় মন্ত্রী-সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদেরও ডিভিশন দেয়া হচ্ছে না। দিনের বেলায়ও তাদের সেলের ভিতরে আটক রাখা হয়।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, ‘যারা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্য, তাদের অবশ্যই দেয়া হয়। আমরা প্রত্যেককে তার ন্যায্য অধিকার দিচ্ছি। আমরা কাউকে নির্যাতন করছি না।’

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা এক হাজার। রয়েছেন আড়াই হাজারের মতো। কারাগারটির জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, হাই সিকিউরিটি কারাগারের একেকটি সেলে একজন করে বন্দি থাকার কথা। কিন্তু আছে দ্বিগুণের বেশি। তাই একেক সেলে দু-তিনজন করে রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যও আমাদের তেমন জনবল নেই, চিকিৎসক নেই।’

সূত্র মতে, কারাগারগুলোতে হাজতি বন্দি বেশি। সংখ্যাটি ৬৭ হাজারের মতো, যা মোট বন্দির ৭৬ শতাংশ। যাদের মামলার বিচার শেষ হয়নি, তাদের হাজতি বন্দি বলে। দেখা যায়, বিচার দীর্ঘ সময় ধরে চললেও অনেকে কারাগারে আটকে থাকেন। জামিন পান না। এ কারণে দিনের পর দিন তারা কারাগারে আটক রয়েছেন। তবে কারাকারে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার কারণে অনেকে নানা ধরনের পানিবাহিত ও চর্ম রোগে ভুগছেন।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান (সদ্য কুমিল্লায় বদলি হয়েছেন) বলেন, চুলকানি, জ্বর, কাশিসহ নানা রোগ নিয়ে তার কাছে প্রতিদিনই ৫০০ থেকে ৬০০ বন্দি আসে। কারও কারও কিডনি ডায়ালাইসিসও দরকার। তিনি বলেন, ‘ভিআইপি’ বন্দিরা কারাগারের বাইরে কিছু হাসপাতালে সেবা নিতে পারেন। সাধারণ বন্দিদের বেশির ভাগের ভাগ্যে চিকিৎসা জোটে না। বন্দি বেশি হলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতেও সমস্যা হয় হয়।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ