ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মোবাইল চুরিতে ত্রিদেশীয় চক্র

প্রকাশনার সময়: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৬ | আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫১

গার্মেন্টস কোম্পানিতে অপারেটর হিসাবে চাকরি করেন ২৪ বছর বয়সি মো. সাকিব। অল্প বেতন, পরিবারের খরচ, মায়ের ওষুধ, ঘরভাড়া, খাবার খরচ দিয়ে সঞ্চয় বলতে তেমন কিছুই থাকে না। তারপরও একটি শখের মোবাইল ফোন কিনতে দেড় বছর টাকা জমিয়েছেন। জমানো ৩৬ হাজার টাকা এবং ১৪ হাজার টাকা ধার করে ৫০ হাজার টাকায় স্যামসাং গ্যালাক্সি সিরিজের একটি মোবাইল ফোন ক্রয় করেন। আনন্দে আত্মহারা সাবিক ওই ফোন দিয়ে ভিডিও কলে কথা বলেন নিকটজনের সঙ্গে। কিন্তু তার সে আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।

গার্মেন্টস থেকে বাসযোগে বাসায় ফেরার পথে জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনটা নিয়ে যায় এক ছিনতাইকারী। পরে ওই ফোনের আইএমআই নাম্বার পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয় ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। এ কারণে জিডি করেও মেলেনি ফল। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ওই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করলে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সূত্রমতে, ছিনতাই হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন সেকেন্ড হ্যান্ড বলে দেশের নামকরা শপিং মলে বিক্রি করত চক্রটি। এ চক্রটির সঙ্গে দুবাই এবং ভারত এবং মালেশিয়ার মোবাইল চোর চক্রের যোগ সাজস ছিল। চক্রটি বাংলাদেশ চুরি হওয়া মোবাইল ভারতে এবং ভারতে চুরি হওয়া মোবাইল বাংলাদেশে বিক্রি করত।

এছাড়া দুবাই এবং মালেশিয়ার থেকেও চক্রটি চোরাই মোবাইল এনে বিক্রি করত। এভাবে এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ফাইনান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের জালে ধরা পড়া ছিনতাইকারীরা হচ্ছেন, মো. আল আমিন, মো. দিপু, মো. আলাউদ্দিন (বাবলু) ওরফে জাপান বাবু, মো. আলী বেপারী, মো. ইউনুছ আলী শুভ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় শতাধিক চোরাই মোবাইল, আইএমইআই কাটার ডিভাইস ১টি ও ল্যাপটপ ১টি।

জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) সাইফুর রহমান আজাদ নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘এখন জিডি করে আর মানুষ তার ফোনগুলো পায় না। কারণ ফোন চুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোরচক্র আইএমইআই নাম্বার কাটার দিয়ে চেঞ্জ করে ফেলে। এরপর তা বিক্রি করে দেয়। এ চক্রের মূল হোতা যমুনা ফিউচার পার্কের একটি দোকানের মালিকসহ সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চোরাই ফোন ইন্ডিয়াতে চলে যায় ইন্ডিয়ার ফোন বাংলাদেশে আসে। এ বিষয়গুলোতে জনসাধারণের সচেতন করা প্রয়োজন। আন অথরাইজ ফোন অথবা চোরাই ফোন অথবা পুরাতন ফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সবার সতর্ক থাকা উচিত।’

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃতরা মোবাইল ফোন চোরাই চক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবত চোরাই মোবাইল সংগ্রহ, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। চক্রটি যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটির মতো বড় শপিং মলে এসব চোরাই মোবাইল বিক্রি করত।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আলাউদ্দিন বাবলু ওরফে জাপান বাবু এবং আলী ব্যাপারি উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত চুরি, ছিনতাই ও পকেটমারের মতো অপরাধ করে আসছে। বিভিন্ন রাস্তা এবং যানবাহনের মধ্যে থেকে এইসব মোবাইল সংগ্রহ করতেন তিনি। তার সংগ্রহকৃত মোবাইলগুলো মো. ইউনুছ আলী শুভ-এর কাছে ব্র্যান্ডভেদে ৪-৬ হাজার টাকায় বিক্রয় করত। শুভ এসব মোবাইল মো. দিপুর কাছে ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। দিপু, শুভ, শরীফ, শ্যামলসহ ও অন্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের ছিনতাইকৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, ডিএসএলআর ক্যামেরা ক্রয় করত।

প্রতিদিন এইভাবে মোবাইল ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী সংগ্রহ করে মাস্টারমাইন্ড আল-আমিন এবং শাহজাহানের কাছে ১২-১৪ হাজার টাকায় বিক্রয় করত। আল-আমিনের যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকান রয়েছে এবং শাহজাহানের বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে মোবাইলের দোকান রয়েছে।

আল-আমিন এসব মোবাইল ক্রয় করে নিজস্ব ল্যাপটপ ও সফটওয়ারের মাধ্যমে আইএমইআই পরিবর্তন করে ব্যবহূত সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন হিসেবে নিজেদের দোকানে রেখে ২৫-৩০ হাজার টাকায় সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রয় করত। এছাড়াও সে ভারত, দুবাই, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে চোরাই মোবাইল বাংলাদেশে এনে বিক্রি করত বলে জানা গেছে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাবলু ওরফে জাপান বাবু আর আলী দুই বন্ধু। তারা নেশার টাকা জোগাড় করতে মোবাইল ছিনতাই করে। সন্ধ্যার পর থেকে বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে টার্গেট খুঁজতে থাকে। এমন সময় নজর পড়ে বাসের জানালায় বসে থাকা সাকিবের (২৪) দিকে। সাকিব সারা দিন কাজ শেষ করে বাসে করে বাসায় যাচ্ছিলেন। এমন সময় বাসের জানালা দিয়ে তার মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায় জাপান-বাবু।

এসব মোবাইল চুরি রোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইল গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, গাড়িতে, রাস্তায় অথবা বাইরে চলাচলের সময় সতর্কতার সঙ্গে মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। কোনো কিছু চুরি বা ছিনতাই হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানায় জানাতে হবে। পুরোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ