ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ৯ রজব ১৪৪৬

তফসিল ১৪ নভেম্বর ভোট ৬ জানুয়ারি!

প্রকাশনার সময়: ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:১৯ | আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৬

সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। এ হিসাবে ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে। সেই লক্ষ্যে ভোটের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে ইসি। অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া অন্যান্য নির্বাচনি সরঞ্জামের বেশির ভাগ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভোটের সার্বিক বিষয়ে অবহিত করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরপর ১৪ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে আগামী বছরে ৬ জানুয়ারি। আপাতত ৬ জানুয়ারি ঘিরেই ছক কষে এগোচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। সিইসির নেতৃত্বে আমরা বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। তাকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে অবগত করা হবে। এরপর ১৪ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর ভোট অনুষ্ঠিত হবে ৬ থেকে ৯ জানুয়ারির মধ্যে যে কোনো দিন। তবে ৬ জানুয়ারিই ভোটের তারিখ ঘোষণার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতিও বিবেচনায় নিচ্ছে ইসি। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করা থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করে কমিশন। নির্বাচনের দিন প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে আগের তুলনায় বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সাধারণত ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য থাকেন একজন করে। এবার তা দুজন করা হতে পারে।

পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের বাইরেও আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নির্বাচনি দায়িত্বে থাকতে পারেন। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে ইসি। সেখানে বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ইসিকে জানিয়েছে, ২০১৪ সালের তুলনায় পুলিশের সক্ষমতা অনেক বেশি বেড়েছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বেড়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে ভোটের পরের ১৫ দিন পর্যন্ত নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখার পরিকল্পনা আছে তাদের।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত নির্বাচনি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ক্ষমতাসিন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সে লক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার বিভিন্ন দিকসহ দলীয় নানা বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিতে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত কমিটির এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন, তফসিল পরবর্তী দলীয় কর্মসূচি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কর্মপন্থা নির্ধারণের মতো বিষয় আলোচনায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ও আগামী নির্বাচন সব মিলিয়ে ৯ তারিখের মিটিংটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন নির্বাচনের মূল কমিটি হবে ও উপকমিটি হবে। এগুলো বৈঠকের এজেন্ডার ভিতরেই আছে।’ এদিকে এবারের নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিদ্রোহী প্রার্থীদের এর আগে একাধিকবার ক্ষমা করা হলেও বিদ্রোহ ঠেকাতেও এবার কঠোর অবস্থানে রয়েছে দলটি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনাও দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে সেটা আমরা ঠিক করে দেব।

যাকে মনোনয়ন দেব ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে কাজ করতে হবে। যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি, সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, ওই সন্ত্রাসী, অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী এরা যদি আসে এ দেশকে আর টিকতে দেবে না। সে জন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে, উন্নয়ন দিতে। এ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে, আমি বিশেষ করে ঢাকাবাসীদের বলব, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই এত উন্নয়ন হয়েছে। সেই কথাটাই যেন তারা মনে রাখে, সেটা মনে রেখেই সবার কাছে আহ্বান করি। আগামী নির্বাচন হবে, তফসিল হয় তো যে কোনো সময় ঘোষণা হবে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে, যাকেই প্রার্থী দিই, সে কানা, খোঁড়া যেই হোক, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের বিজয়ী করবেন।

আন্দোলনেই নজর বিএনপির: নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে শুরু হলেও আপাতত নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির নজর এখনো মাঠের আন্দোলনেই। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ঠেকাতে লাগাতার আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতালের পর অবরোধসহ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিরোধী জোট। সামনে তা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে তারা। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটির এখন একমাত্র লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রতিহত করা। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনা। জানতে চাইলে বিএনপির সহসম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, ‘সরকার একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির মতো একটা বড় দল যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পুন্যশক্তি রয়েছে সে রকম একটা রাজনৈতিক দলকে তারা নির্বাচনের বাইরে রাখতে চাচ্ছে। আমাদের আন্দোলনে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী এবং পুলিশ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে। তারা নিজেরা আগুন সন্ত্রাস করে নাম দিচ্ছে আমাদের নেতাকর্মীদের। সরকার চাইলেই অগ্নিকাণ্ডের সিসিটিভ ফুটেজ বের করতে পারে কিন্তু তারা সেটা না করে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্ততার করছে। এ সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার। এ সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।

সমঝোতা না হলে সংঘাত বাড়ার শঙ্কা: নির্বাচনের সময় যতই কাছে আসছে ততই মুখোমুখি অবস্থানে যাচ্ছে দেশের প্রধান দুই দল। আন্দোলনের নামে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছেন নেতাকর্মীর। সংকট সমাধান না হলে তফসিল ঘোষণার পর সংঘাত আরও বাড়তে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের। এমন পরিস্থিতিতে মতভেদ নিরসনে বড় দুই দলকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। কিন্তু প্রধান দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে সমঝোতার কোনো আভাস মিলছে না। দুই দলেই তাদের শর্তে অনড়। আর শর্তহীন সংলাপ ছাড়া সমাধান মিলবে না বলেও মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

বিদেশি কূটনৈতিকরাও বলছেন সংলাপের কথা। সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। আমি আশা করি, সব পক্ষ শর্তহীনভাবে সংলাপে বসে সামনে দিকে এগোবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজে নেবে।’ তবে সংলাপের বসার বিষয়ে অনীহা বড় দুই দলের। আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই সংলাপের বিষয়ে স্পষ্ট ‘না’ করে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘খুনিদের সঙ্গে কিসের বৈঠক, কিসের আলোচনা।

যারা এভাবে মানুষ হত্যা করে, উন্নয়নকে ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? বরং সে (পিটার হাস) বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। খুনিদের সঙ্গে ডায়ালাগ— এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য। যেটুকু অর্জন করেছিল তারা, আমরা সুযোগ দিয়েছিলাম। সেটা তারা হারিয়েছে।’ বিএনপিরও অনীহা রয়েছে সংলাপের বিষয়ে। দলটির নেতারা বলছেন, ‘শুধু নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিলেই সংলাপ হতে পারে।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক প্রফেসর ড. সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে ঠকেছে। তাই তারা আর আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করবে না। আবার তারা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছে সেটাও সংবিধানের ভেতর থেকে সম্ভব নয়। তাই এ দাবিও আওয়ামী লীগ মেনে নেবে না। আর দুই দলের সমঝোতা না হলে নির্বাচনের পরিবেশ যতই ঘনিয়ে আসবে সংঘাত ততই বাড়বে। সেক্ষেত্রে দুই দলকেই এক স্টেপ পেছনে এসে আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করতে হবে। তা না হলে সংঘাতে দেশের সম্পদের যেমন ক্ষতি হবে তেমনই সাধারণ মানুষ এক অনিশ্চয়তার মধ্য থাকবে। যা যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই কাম্য নয়।

নয়াশতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ