মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় দীর্ঘ ১৭ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ শর্ত দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ কখন এবং কিভাবে পুনরায় চালু করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যে সকল বিষয় বিবেচনা করতে হবে তা হলো-
সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক/কর্মচারী ও সমাজের মঙ্গল এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে তাদের সকল প্রকারের ঝুঁকি কমানোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা, স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যে সকল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।
সরকার যদি স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা আবশ্যক বলে জানিয়েছে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সেগুলো হল-
১. নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলে, প্রি-স্কুল ব্যতীত সকল স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় খুলে দেওয়া যেতে পারে।
২. সকল স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সকলের মাস্ক পরা নিশ্চিত করা এবং ব্যাতয় হলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কেন্দ্রীয়ভাবে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করা। একইসাথে অন্যান্য জনস্বাস্থ্য পদক্ষেপসমূহ, যেমন হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া/ হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন করা) এবং সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা।
৩. স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক এবং কর্মচারীবৃন্দকে কোভিড-১৯ এর টিকা নেওয়া থাকতে হবে, এবং তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন পার হবার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ১ম ডোজের ১৪ দিন পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে।
৪. উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১৮ বছরের অধিক বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. শ্রেণিকক্ষে এবং শিক্ষাপ্রিতিষ্ঠানসমূহে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোনদিন হবে তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন, প্রথমদিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া, বাকি সকল ক্লাস সপ্তাহের ১-২ দিন খোলা রাখা। এতে করে একটি নির্দিষ্ট দিনে যেই ক্লাসটি খোলা থাকবে তার শিক্ষার্থীরা অন্যান্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দুরত্ব মেনে বসতে পারবে।৬. আবাসিক সুবিধা সম্বলিত স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিম্নোক্ত পরামর্শসমূহ মেনে চলা (মাদ্রাসা সহ):
ক. সকল সমাবেশ স্থানসমূহ (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি/স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা- রান্নাঘর থেকে রুম সমূহে সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা।
খ. একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা।
গ. মাদ্রাসায় একসাথে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলা।
৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়ার পূর্বে ”করনীয়” এবং ”বর্জনীয়” কাজ সম্পর্কে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিবাবকসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দকে একটি ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া। এই ওরিয়েন্টেশন সীমিত উপস্থিতি ও নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে সশরীরে আয়োজন করা তবে প্রয়োজনে অনলাইন সেশনের মাধ্যমে নেওয়া। এ সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত লিফলেট তৈরি এবং বিতরণ করা এবং ”করনীয়” এবং ”বর্জনীয়” বিষয়গুলো মিডিয়া এবং স্থানীয় ক্যাবল-লাইনের মাধ্যমে প্রচার করা যেতে পারে। যে সকল শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ এর লক্ষণ থাকবে তাদের বাড়িতে কোয়ারেন্টিন/আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টিন/আইসোলেশন থাকাকালীন তাদের চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা এই ওরিয়েন্টেশনে থাকতে হবে। যে সকল শিক্ষার্থীদের রোগের লক্ষণ পাওয়া যাবে অথবা তাদের পরিবারের কারও এরকম লক্ষণ থাকবে অথবা কোভিড-১৯ রোগ পাওয়া যাবে তাদেরকে অনুপস্থিত গণ্য না করে ১৪ দিন বড়িতে থাকার অনুমতি দিতে হবে।
৮. স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করতে হবে। নির্বচিত কিছু স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কর্মচারীদের নমুনা পরীক্ষা এবং সার্ভেইলেন্সের প্রোটোকল তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। যে সকল জেলায় আরটিপিসিআর ল্যাব আছে সে সকল জেলার স্কুল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই সার্ভিল্যান্সের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যে সকল জেলায় সংক্রমণের হার ২০ শতাংশের বেশী সেই জেলাগুলোতে আরও নিবিড় সার্ভেইলেন্সের ব্যবস্থা করা।
৯. সকল বিধিনিষেধ সুষ্ঠু পালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মনিটরিং টিম গঠন করে দৈনিক মনিটরিং করতে হবে।নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ