ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘গলার কাঁটা’ ১২ উড়োজাহাজ

প্রকাশনার সময়: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত পড়ে আছে ১২টি উড়োজাহাজ। এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে বা মেরামত করে ফের চালু করতে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও তা আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স। ফলে উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

তবে এই নিলাম প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি সংস্থাটি। পাশাপাশি নিলামে যদি কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া না যায়, তাহলে উড়োজাহাজগুলো কেজি দরে বিক্রি করা হবে। তবে এ উদ্যোগে একমত নয় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

তাদের দাবি, কোনো কোনো উড়োজাহাজ ব্যাংক ঋণ নিয়ে কেনা। এভাবে বিক্রি করলে সেগুলোর কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যাবে না। ফলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এয়ারলাইন্সগুলো। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটটি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি।

হযরত শাহজালাল অন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো অপসারণ করা হলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। এখন নিলাম করা গেলে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া টাকা যেমন উসুল হবে, তেমনি কার্গো ভিলেজে জায়গাও ফাঁকা হবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রী পরিবহন শুরুর আগেই এগুলো অপসারণ করা দরকার।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের অনেকবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো জবাব দেয়নি। তাদের কাছে পাওনা অর্থও পরিশোধ করেনি। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এখন সিভিল অ্যাভিয়েশন আইন অনুযায়ী পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াপ্ত করে দ্রুত নিলামের আয়োজন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে নিলামের প্রক্রিয়া নির্ধারণে কর্মপদ্ধতি ও সুপারিশমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন কোনো এয়ারলাইন্সের ব্যাংকের কাছে ঋণ বা মর্টগেজ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই জব্দ তালিকা তৈরিসহ বাকি কাজ করা হবে।’ তবে নিলাম চূড়ান্ত করতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি তিনি।

বেবিচক সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটটি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের দুটি, জিএমজি এয়ারলাইন্সের একটি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব উড়োজাহাজের পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। জিএমজির কাছে ৩৬০ কোটি টাকা পায় বেবিচক। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট স্থগিত করে জিএমজি এয়ারলাইন্স। এরপর আর কখনও আকাশে ডানা মেলেনি জিএমজির উড়োজাহাজ।

রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ২০০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চে বন্ধ হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। তবে তার আগেই বেশ কয়েকটি রুটে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। এর বাইরে পার্কিং চার্জ ও সারচার্জ বাবদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে বকেয়া ৩৫৫ কোটি টাকা। দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র বিমান কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বন্ধ ২০১৬ সাল থেকে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, উড়োজাহাজগুলোর রেজিস্ট্রেশন আগেই বাতিল করেছে বেবিচক। এরপর বিমানবন্দর থেকে সেগুলো সরিয়ে নিতে দফায় দফায় নোটিশ দেয়া হয়েছে। বছরখানেক আগে বকেয়া আদায়ে উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। তখন কয়েকজন মালিক বকেয়া পরিশোধে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। সেই সময় পার হলেও তাদের দেখা নেই। এ জন্য ফের নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। নিলামে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেলে প্রয়োজনে উড়োজাহাজগুলো কেজি দরে বিক্রি করা হবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব এয়ারলাইন্সের একটিরও অফিস ও ঠিকানা নেই এখন। ফলে অনেক খোঁজ করেও সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, এগুলোর কারণে বিমানবন্দর পরিণত হয়েছে বিশাল এক ডাম্পিং স্টেশনে। ঘিঞ্জি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কার্গো ভিলেজ এলাকায়। পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়া হলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যেত। একই সঙ্গে কার্গো প্লেনে মালামাল ওঠানামাও সহজ হতো।

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ