২ সেপ্টেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের বক্তব্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এও বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু কমলেও সবাইকে সাবধানে থাকা উচিত। হয়তো লকডাউন তুলে নিয়েছি। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিটা মেনে চলার জন্য সবাইকে অনুরোধ করব। খুব তাড়াতাড়ি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। সেই ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের টিকা দেয়া হয়েছে।
আমরাও চাই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। কারণ গত প্রায় দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন থেকে একেবারেই ছিটকে পড়েছে বলা যায়। হয়ে পড়েছে ঘরবন্দি।
নিয়মিত পড়াশোনা, মাঠে গিয়ে খেলাধুলা করা, বন্ধুদের আড্ডা, বাইরে বের হওয়া সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বড় ধরনের মানসিক চাপে পড়েছে। চাপে পড়েছেন অভিভাবকরাও। কারণ অনেক অভিভাবক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, অনেকের আয় কমে গেছে, অনেকে হয়ে পড়েছেন নিঃস্ব। সে ক্ষেত্রে পরিবার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। কারণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন কাঠামো দুর্বল থাকলেও টিউশনি করে অনেকে তা পুষিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু সব আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। আবার অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা নিজেদের পড়াশোনার খরচ টিউশনি করেই জোগাড় করে নিত। পরিবারের ওপর চাপ ফেলত না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারাও বেকার হয়ে পড়েছে। সার্বিক বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জীবনে নেমে এসেছে গভীর অমানিশা।এ কথা সত্য যে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে খুদে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকার কোনো ঝুঁকিতে যেতে চায়নি। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা তাদের জন্য কঠিনই হয়ে যেত। যে সময় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন প্রকৃতঅর্থেই করোনার ধরন ছিল ভয়াবহ। এখনো যে, করোনা তার হিংস্র থাবা গুছিয়ে নিয়েছে তা নয়। তবে করোনা মোকাবিলা করার মানসিক শক্তি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে আশানুরূপভাবেই তৈরি হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী যখন নির্দেশ দিয়েছেন তখন আমরা আশা করি শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সব দায়িত্ব শুধু সরকার বা প্রশাসনের নয়। প্রত্যককে নিজ থেকেও নিরাপত্তার বিষয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। তা যদি না হয়, তবে এতদিনের সব সতর্কতা নিষ্ফল হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ। আজকে যারা শিক্ষার্থী তাদের মধ্যেই কেউ না কেউ এক সময় দেশের হাল ধরবে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্ব হাতে নেবে। সুতরাং তাদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র সবদিক বিবেচনা করেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমরা মনে করি।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ