ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

লোডশেডিংয়ে পানি সংকট, বিপাকে রাজধানীবাসী

প্রকাশনার সময়: ০৭ জুন ২০২৩, ২২:৫৪ | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ২৩:০৭

দিনে তীব্র তাপদাহ, রাতে ভ্যাপসা গরম। সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং ও পানি সংকট। যার ফলে দুর্বিষহ জনজীবন।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন ২৫৫ থেকে ২৬০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। ওয়াসা প্রায় ২৮০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। গরমের কারণে এখন পানির চাহিদা বেড়ে দৈনিক ৩০০ কোটি লিটারের কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে বেশি সংখ্যক এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব পড়ছে পানিতে। বিদ্যুতের অভাবে ঠিকমতো পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না। মানুষের এমন ভোগান্তিতে ওয়াসার এখন শেষ ভরসা বৃষ্টি। ওয়াসার বলছে, লোডশেডিং যে হারে বাড়ছে তাতে তাদের হাতে কিছু করার নেই। এখন একদিন বৃষ্টি হলেই পানি সংকট কেটে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় জেনারেটর দিয়ে চলছে পানি সরবরাহ।

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লোডশেডিংয়ের কারণে পানির লাইনে ঠিকমতো পানি আসছে না। ফলে পানি কিনে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। কোথাও আবার পানি থাকলেও ঘণ্টা ধরে পানির ট্যাংক ভরানো যাচ্ছে না। তাই ওয়াসা স্থানীয় পাম্প থেকে সিরিয়াল দিয়ে পানি কিনে ব্যবহার করছে অনেকেই।

রাজধানীর উত্তরা ৩ নং সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাবের পাশে ওয়াসা পাম্পে সিরিয়াল দিয়ে আসছেন মো. শফিকুল ইসলাম (ছন্দনাম)। বাসায় পানি না থাকায় বিকেল থেকেই পানির জন্য হতাশায় ভুগে এক পর্যায়ে পানি কেনার সিন্ধান্ত নেন তিনি। সিরিয়াল দীর্ঘ হওয়ায় তার মুখে হতাশার ছাপ!

জানতে চাইলে তিনি নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে পানি আসেনি। দুপুর বিকেল পর্যন্তও পানি না আসায় বের হয়েছি পানি সংগ্রহ করতে। বাসায় ভাড়াটিয়ারা আছে, পানি না থাকলে সমস্যায় পড়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘ওয়াসা পাম্পে সিরিয়াল দিয়ে এসেছি। কিন্তু সিরিয়াল অনেক লম্বা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পানির সমস্যা যে শুধু আমার একার তা নয়। পাম্পে অনেক লোকের সিরিয়াল। তারাও আমার মতো পানি নিতে এসেছে। একদিকে পানি নেই, অন্যদিকে লোডশেডিং। সবকিছু মিলিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবুও কি করার।’

তথ্য বলছে, রায়েরবাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, মিরপুরের মণিপুর, বড়বাগ, পীরেরবাগ, বারিধারার নুরের চালা, ভাটারা, কুড়িল বিশ্বরোড, বাড্ডা, আফতাবনগর, মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা ঠিক মতো পানি পাচ্ছেন না।

চলমান লোডশেডিং ও তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর থেকে মিরপুরের বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পানি সংকট নিয়ে মাসুম রহমান বলেন, ‘লোডশেডিং আর তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকায় পানি সংকট বেড়েছে। দিনে খুব সামান্য সময়ের জন্য লাইনে পানি থাকে। এই পানি দুর্গন্ধযুক্ত ব্যবহার উপযোগী না।’

আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দিনের মধ্যে পানি থাকে দুই ঘণ্টার মতো। অনেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানি উঠিয়ে ব্যবহার করেন। স্বাভাবিকভাবে পানি থাকে না। সবকিছু মিলিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের।’

জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির প্রায় ৬৭ শতাংশ আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে গভীর নলকূপ দিয়ে টেনে এই পানি তোলা হয়।

সংস্থাটির তথ্য বলছে, এখন ঢাকা ওয়াসার ১ হাজার ৬১টি পাম্প (স্ট্যান্ডবাইসহ) রয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকলে ওয়াসা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলো চালায়। তবে জেনারেটর দিয়ে সব পাম্প চালানোর মতো সক্ষমতা ওয়াসার নেই। অনেক পাম্প বন্ধ রাখতে হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টিপাত না থাকা ও তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষের পানির চাহিদা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি এলাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে পানি সরবারহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। আশা করি অচিরেই এই সংকট কেটে যাবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘পানি সরবরাহ অতি জরুরি একটি সেবা। লোডশেডিং বা অন্য কোনো কারণে এই সেবায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সেটার প্রস্তুতি থাকা উচিত। বিদ্যুতের চেয়ে পানি সংকটে মানুষের ভোগান্তি বেশি হয়। অসন্তোষও বেশি হয় পানি সংকটে।’

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ