এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে এক শিক্ষার্থী। তবে ইতালি যাওয়ার জন্য তার এসএসসি পাসের সনদ দরকার। সনদটি পাওয়া তার জন্য খুব কঠিন হয়নি। সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তার সনদের ব্যবস্থা হয়। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেই রেজাল্টের তথ্য পরিবর্তন হয়ে যায়। সেই তথ্য দিয়ে তৈরি হয়ে যায় পাসের সনদ। জালিয়াতি এতটাই নিখুঁত যে বোর্ডের আর্কাইভে যাচাই করতে গেলেও পরিবর্তিত তথ্যই দেখা যায়।
সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নূর রিমতি, জামাল হোসেন, এ কে এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও আবেদ আলী। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পাসের সনদ, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নাম ও বয়স সংশোধনের পাঁচটি আবেদনপত্র, 'ওয়েব বেজড রেজাল্ট পাবলিকেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন বোর্ডস' লেখা দুটি অনলাইন রেজাল্ট শিট এবং 'মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা' লেখা আটটি খাম উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নূর তাবাসসুম সুলতানা ২০১৯ সালে ধানমন্ডির কামরুননেছা গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেওয়া মোবাইল ফোন নম্বরে গত ২১ আগস্ট তিনি একটি এসএমএস পান। সেখানে তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঠিক থাকলেও নাম এবং মা-বাবার নামসহ জন্মতারিখ পরিবর্তিত দেখতে পান। তখন তিনি স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পান। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত করে ডিবি।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত নূর রিমতি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাসের সনদ প্রয়োজন ছিল। জাল সনদ তৈরির জন্য তিনি তার মামা জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ কে এম মোস্তফা কামালের সঙ্গে সাড়ে তিন লাখ টাকায় চুক্তি করেন। মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন ও আবেদ আলীর যোগসাজশে নূর তাবাসসুম নামে এক শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তারা প্রথমে ওই শিক্ষার্থীর নাম, তার বাবার নাম ও মায়ের নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরম্যাটে আবেদন করেন। শিক্ষা বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকার বিনিময়ে বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে সংরক্ষিত কৃতকার্য শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুমের তথ্য বদলে অকৃতকার্য নূর রিমতির তথ্যগুলো আপলোড এবং জাল সনদ তৈরি করে। পরে জন্মতারিখও পরিবর্তন করে দেয়। এই চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্মতারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।
ডিবির এই কর্মকর্তা অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড থেকে যারা কৃতকার্য হয়েছে, বোর্ডের রেজাল্ট আর্কাইভে ঢুকে ফলাফল যাচাই করে তাদের তথ্য যাচাই করে দেখুন। কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করুন।
সাতজন রিমান্ডে : জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার সাতজনকে এক দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় সাত দিন করে রিমান্ড চান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম তাদের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ