ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইরাকে নির্যাতন, দেশে মুক্তিপণ আদায়

প্রকাশনার সময়: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ২০:৩১

বাংলাদেশি এক ইরাকি একটি চক্র টার্গেট করে বিভিন্ন মানুষকে জিম্মি করে নির্যাতন করে অর্থ আদায় করে আসছিল। এই চক্র চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে কাজের উদ্দেশ্যে ইরাকে পাড়ি জমানো যুবকদের একটি কক্ষে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমোতে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভিডিও কল দিয়ে নির্যাতন চালাত।

এরপর পরিবারের সদস্যদের কাছে দাবি করা হতো মোটা অংকের টাকা। টাকা না দিলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়া হতো। এভাবেই এই চক্র হাতিয়ে নিয়েছেন অন্তত ৩০ লাখ টাকা। তবে এর শেষ রক্ষা হয়নি। এই চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী(২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮), মো. আকবর সরদার (৫৫)। তাদেরকে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা ও খুলনা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ভুক্তভোগী ইরাক প্রবাসী মোসলেম মোল্লা নবাবগঞ্জ দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি ২০১৬ সালে কাজের উদ্দশে ইরাক যান।

সোমবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেড কোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।

মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘ইরাকে অবস্থানের সময় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ সেলিম মিয়ার সঙ্গে ভুক্তভোগীর পরিচয় হয়। সে ভুক্তভোগীকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ইরাকের চক্র আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বিরদের হাতে তুলে দেয়। এরপর তাকে নিয়ে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে হাতে পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখে। এ সময় মোসলেমের কাছে থাকা ২ হাজার ডলার, দেড়লাখ টাকা মূল্যের আইফোন টুয়েলভ ছিনিয়ে নেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর মোসলেমের মাকে ভিডিও কল দিয়ে মোসলেমের উপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। ইমোতে কল দিয়ে নির্যাতনের চিত্র দেশে থাকা তার মাকে দেখানো হয়। এবং ছেলেকে ছাড়তে ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সাত লাখ টাকায় কন্ট্রাক হয়। মোসলেমের মা দেশে থাকা দালাল চক্রের অন্য সদস্যদেরকে বিকাশে ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এরপর মোসলেমকে না ছেড়ে প্রতারক চক্র আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মোসলেমের উপর পুনরায় নির্যাতন করা হয়।’

পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এরপর এই ঘটনায় ভিকটিমের মা খতেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এরপর দীর্ঘ দুই বছর চেষ্টা করে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতার ৮ আসামিদেরকে আদালতে পাঠালে ৬ জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘এই আসামিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় আরও একাধিক মামলা রয়েছে। আমাদের কাছে এই ঘটনায় চারটি অভিযোগপত্র এসেছে। এই চারজনের পরিবারের কাছ থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চক্রটি। এই চক্রে দেশি-বিদেশি সদস্যরাও রয়েছে। তারা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের যুবকদের জিম্মি করে এভাবে অর্থ আদায় করে।’

ভুক্তভোগী মোসলেম মোল্লার সঙ্গে পিবিআই হেডকোয়াটারে কথা হয় নয়া শতাব্দীর। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে ইরাকে যাই। ২০২১ সালে করোনার সময় হঠাৎ করে আমার চাকরি চলে যায়। এরপর চাকরির জন্য সেলিম মিয়া নামের এক ব্যাক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর সে আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে নিয়ে এই প্রতারব চক্রের হাতে তুলে দেয়। তারা আমার হাতে পায়ে শিকল পড়িয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সারা সড়িয়ে পেটাতো। অমানষিক নির্যাতন করত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমার পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে দেখাত। পরে আড়াই মাস পরে শিকল খুলে দিলে একবার ছাদে গিয়ে সূর্যের আলো দেখি। চারমাস পর একবার সুযোগ পেয়ে একতলা ভবন থেকে লাফিলে পালাই। এ সময় পড়ে গিয়ে আমার পা ভেঙে যায়।’

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ