মুনিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) অব্যাহতির আবেদনসহ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। গত ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে এটি জমা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। এই মামলার তদন্তে মুনিয়া আত্মহত্যা ঘটনার সঙ্গে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। বরং তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা করা হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে তরুণী মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা করেন তার বোন নুসরাত। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে অব্যাহতির আবেদন করে।
চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল গুলশানের একটি অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে তরুণী মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতেই গুলশান থানায় মামলা করেন তার বড় বোন নুসরাত। এতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে আসামি করা হয় বসুন্ধরার এমডি আনভীরকে। নিহত ওই তরুণীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়।
পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সাংবাদিকদের তখন জানান, ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পুলিশ এই মামলার তদন্তের স্বার্থে বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে তার বক্তব্যে অনেক গরমিল পাওয়া যায়। তিনি অনেক তথ্য গোপন করেন এবং বসুন্ধরার এমডিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় জড়ান বলে প্রতীয়মান হয়।
এমনকি তদন্তে মুনিয়ার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের তথ্য উঠে আসে, যা ইতিমধ্যে নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে মুনিয়াকে দিয়ে আর্থিকভাবে নুসরাতের লাভবান হওয়ার কথা জানা যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মুনিয়া গুলশানের লক্ষাধিক টাকার ভাড়ায় যে ফ্ল্যাটে থাকতেন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন তার বোন নুসরাত। ভাড়া মেটানো বা অভিজাত এলাকায় তার জীবনযাপনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগান দেওয়ার মতো সচ্ছল নয় তার পরিবার। বোন নুসরাতের তত্ত্বাবধানে ছিলেন মুনিয়া। ভাই আশিকুর রহমান সবুজের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। প্রতি মাসে মুনিয়ার খরচের টাকা সংগ্রহ হতো কীভাবে? পুলিশ এসব প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত এগিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু বাসা ভাড়া বা খরচই নয়, নুসরাতকেও নিয়মিত টাকা দিতেন মুনিয়া। এমনকি ভাই সবুজের বিরুদ্ধে উত্তরাধিকারের দাবিতে করা মামলাটি পরিচালনার ব্যয়ও মিটাতে হতো তাকে। মুনিয়ার আত্মহত্যার পেছনে এটিও কারণ বলে ধারণা করা হয়েছে।
মুনিয়ার মৃত্যুর পরপরই হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরীর সঙ্গে তার বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, শারুনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মুনিয়ার। আত্মহত্যার ঘটনার আগেও তাদের মধ্যে কথোপকথন হয়। মুনিয়া যে মানসিক বিষণ্ণতা ও হতাশায় ভুগছিলেন, সেটিও তার কথোপকথনে স্পষ্ট ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে. শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে নুসরাতেরও বিভিন্ন সময় কথা হয়েছে। কী নিয়ে তারা কথা বলেছেন সে বিষয়গুলোও মামলার তদন্তে দেখা হয়েছে। এ ছাড়া মুনিয়া যে বাসায় থাকতেন তার সিসিটিভি ফুটেজগুলোও তদন্তে যাচাই-বাছাই করা হয়।
এসব কিছু বিচার ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মুনিয়া আত্মহত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানায় সূত্র।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ