দেশের বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা বাবা ও মায়ের ঘাতক উঠতি বয়সী তরুণী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রাহমানের কথা মনে আছে? ২০১৩ সাল থেকে কারাগারে থাকা ঐশীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে যাবজ্জীবন সাজার রায় হয়েছে। সাজার রায় হওয়ার পর থেকে কারাগারে তাকে থাকতে হচ্ছে কয়েদির পোশাকে।
বর্তমানে কাশিমপুরের মহিলা কারাগারে অবস্থান করা ঐশী একাকি জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার থেকে কেউ সেভাবে খোঁজও রাখেনি এই তরুণীর। তবে মাঝে মধ্যে কারাগার থেকে ফোনে পরিবারের সঙ্গে ঐশী যোগাযোগ করেন বলে কারাসূত্রে জানা গেছে।
ঐশী রহমানের বাবা ছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান। তার মা ছিলেন স্বপ্না রহমান।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট সকালে চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই ঐশী বাসা থেকে পালিয়ে যান।
পরদিন ১৭ আগস্ট মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওইদিনই ঐশী পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তার বাবা-মাকে খুন করার কথা জানান।
২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ঐশী। পরে অবশ্য ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্য, আলামত ও অন্যান্য যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে তা নাকচ করে দেন আদালত।
কারাগারের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ফজরের আজানের সময় ঘুম থেকে ওঠেন ঐশী। তিনি ফজরের নামাজ দিয়ে দিন শুরু করেন। এরপর দৈনিক নিয়ম করে পত্রিকাও পড়েন।
এছাড়াও নানা ধরনের বইপত্র পড়ে সময় কাটান এই তরুণী। কারাগারে মাঝেমধ্যে তাকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়তেও দেখা যায় বলে জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, ঐশী যখন তার বাবা-মাকে হত্যা করে তখন তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। বাসায় নেশা করার জন্যই কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে এবং পরে কুপিয়ে হত্যা করেন বাবা-মাকে।
তবে কারাগারে যাওয়ার পর পুরোপুরি বদলে গেছে আগের জীবন। রায়ের পর থেকে বলতে গেলে একদম চুপচাপ হয়ে যান ঐশী।
কারাগারের ওই সূত্রটি আরও জানায়, কারাগারে ঐশী ভালো আছেন। সবসময় চুপচাপ থাকেন। নামাজ-কালাম পড়ে সময় কাটে তার। এছাড়া কিছু বইপত্র পড়েন।
পরিবারের কেউ খোঁজখবর নিতে আসে কি-না জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন করোনার কারণে দেখা সাক্ষাৎ একেবারেই বন্ধ। আমি এখানে আসার পর এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কাউকে আসতে দেখিনি।’
ওই সূত্রটি জানায়, মাঝেমধ্যে কারাগার থেকে ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন ঐশী।
বাবা-মাকে হত্যার দায়ে ২০১৫ সালে ঐশীকে ফাঁসির আদেশ দেন বিচারিক আদালত। তার বন্ধু রনির সাজা হয় দুই বছরের কারাদণ্ড। পরে আপিলে ২০১৭ সালের ৬ জুন উচ্চ আদালত ঐশীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করে। সেই থেকে ঐশী স্থায়ীভাবে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আছেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ