কাঙ্ক্ষিত পণ্য না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে গ্রাহকদের অস্ত্রসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত একটি চক্র। চক্রটি নিজস্ব টর্চার সেলে নিয়ে লাঠিপেটা, বৈদ্যুতিক শক, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে ভুক্তভোগীদের তাড়িয়ে দিত।
ভয়ানক এই কর্মকাণ্ডের মূলহোতা ফাল্গুনীশপ ডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পাভেল হোসেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষের কাছ থেকে এভাবে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাভেলসহ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪।
গতকাল বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন, সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান ও ফারজানা আক্তার মিম। এ সময় ফাল্গুনীশপ ডটকমের অফিস থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলি, ২৪ ক্যান বিয়ার, চার বোতল দেশি মদ, প্রাইভেটকার, কম্পিউটার, প্রিন্টার, বিপুল পরিমাণ এন-৯৫ মাস্ক, ১০০টি ইনভয়েস, ৩০টি চেক বই ও ৮০টি সিল জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজ্জাম্মেল হক।
তিনি বলেন, ফাল্গুনীশপ ডটকম, অরিমপো ডটকম ও টেক ফ্যামিলি ডটকম নামে একাধিক ই-কমার্স সাইট খুলে নিত্যপণ্যের বাজার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে অনলাইনে বিক্রির জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করা হতো। এভাবে চক্রের মূলহোতা পাভেল তার সহযোগীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। পাভেলের অন্যতম সহযোগী সাইদুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল হাসান ও ফারজানা আক্তার মিম।
পাভেলের অংশীদাররা এ বিষয়টি জয়েন্ট স্টক অথরিটিকেও অবহিত করেন। পাভেল তাদের নামে জাল সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহকদের প্রতারিত করতেন। তাদের নাম ব্যবহার করে যৌথনামে চেক ইস্যু করতেন। ২০২১ সালের মে মাসে প্রতারণার অভিযোগে কয়েকজন গ্রাহক পাভেলের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন। পরে পাভেল সিআইডির কাছে গ্রেপ্তার হয়ে ২১ দিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হন। কিছু গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ দিলে অধিদপ্তর একাধিকবার ফাল্গুনীশপ ডটকমের আউটলেট বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের জুলাই মাসে পাভেল খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অরিমপো ডটকম ও টেক ফ্যামিলি ডটকম নামে নতুন অফিসের আড়ালে ফাল্গুনীশপ ডটকমের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অরিমপো ডটকম ও টেক ফ্যামিলি ডটকমে নিজে এমডি ও তার স্ত্রী রিতা আক্তার চেয়ারম্যান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
২০১৯ সাল থেকে পাভেল হোসেনের নিজস্ব ব্যাংক হিসাব থেকে প্রায় চার কোটির বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তার নামে ফাল্গুনীশপ ডটকম, ফাল্গুনী শপ ও ফাল্গুনী শপ বিডিসহ মোট ২৮টি নামসর্বস্ব কোম্পানির সন্ধান পাওয়া যায়। তবে ফাল্গুনীশপ ডটকম কোম্পানি ছাড়া বাকি ২৭টি কোম্পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পাভেল অনলাইন শপের নামে কোনো ব্যাংক হিসাব না খুলে তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করে অন্যত্র স্থানান্তর বা জমি ও প্লট কিনে টাকা লেয়ারিং করতেন বলে র্যাব জানিয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ