ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

টিকটকে নারীদের ভয়াবহ সর্বনাশ!

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৬:২৪ | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৩২
টিকটক রাজ ওরফে মো. আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন

বর্তমানে দেশে ভয়াবহ একটি চক্র টিকটকে কাজ করছে। এদের দেখলে বোঝার উপায় নেই যে তাদের মাধ্যমে সমাজের মানুষ কতটা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে স্কুল-কলেজের ছাত্রী, এমনকি যুবতী গৃহবধূকে টার্গেট করা হয়। তাদেরকে ফুসলিয়ে পাচার করা হয় অন্য দেশে। সেখানে নিয়ে তাদেরকে বিক্রি করা হয় অথবা জোরপূর্বক দেহব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়।

এবার র‌্যাবের হাতে আটক হলো এমনই একজন ভয়াবহ দুর্ধর্ষ ব্যক্তি। যিনি কিনা এই অ্যাপ ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণা ও নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত করতো।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতের নাম-টিকটক রাজ ওরফে মো. আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম ভার্চুয়াল জগতে ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিভিন্ন প্রতারণা ও বিভিন্ন অপরাধ সম্পর্কে তথ্য পায়। র‌্যাব শুধুমাত্র মাঠ পর্যায়ে নয়, ভার্চুয়াল জগতেও যারা ভুয়া পরিচয় প্রদান করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রেখে চলেছে। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার র‌্যাব-২ ও ৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূয়া পরিচয়ে টিকটক ব্যবহার করে প্রতারণা, নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাককমেইল এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টিকটক রাজ ওরফে মো. আব্দুর রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় একটি মোবাইল, সাতটি সিমকার্ড, মেমোরি কার্ড, র‌্যাব ইউনিফর্ম ও স্কাপ, ভুয়া আইডি কার্ড, চেইনসহ বাঁশি, বুট ইত্যাদি জব্দ করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে টিকটক রাজ ভার্চুয়াল জগতে ভুয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার সম্পর্কে তথ্য দেয় বলে জানায় র‍্যাব।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজ ওরফে মো. আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন দীর্ঘদিন যাবৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যথাক্রমে টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল। সে বিগত দুই বছর যাবৎ অনলাইন প্লাটফর্মে এমন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়।

তার নির্মিত ও প্রচারিত মুখরোচক ভিডিও’র মাধ্যমে টিকটকে ইতোমধ্যে ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ এবং ফলোয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রতারক। সে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন নারীদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতো।

র‍্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় চুল কাটাসহ পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করতো। সে বিভিন্ন বাহিনীর ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতো। সে বিভিন্ন বাহিনীর প্রচারমূলক ভিডিওসমূহ সুবিধাজনকভাবে এডিট করে সেখানে নিজের অবস্থান দেখিয়ে প্রচার করতো। একইভাবে ফটোশপ করে বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি প্রচার করতো।

এ ছাড়া বাহিনীর প্রাত্যহিক জীবনের ভূয়া ভিডিও তৈরি করতো। সে নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিতি পেতে অন্যের বাড়ি ও আমবাগানসমূহ নিজের বলে চালিয়ে দিতো। পাশাপাশি বিভিন্ন ইমোশনাল ভিডিও তৈরি করতো যাতে তাকে ঠকবাজ না মনে হয়। সে ঠকবাজি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নারীদেরকে প্রলুব্ধ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তী সময়ে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতো।

সে টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামী অলংকার পরিধান করতো বা অবস্থাসম্পন্ন মনে হতো তাদেরকে টার্গেট করতো। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে ঠকবাজি বা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের গলার হারসহ অন্যান্য অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করতো।

গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব আরও জানায়, সে টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে বিজিবির একজন ল্যান্স নায়েক পদবীর সদস্য বলে পরিচয় দিতো। বিজিবি থেকে র‌্যাবে তার পদায়নের ফলে সে র‌্যাব-১২ তে কর্মরত বলে মিথ্যা পরিচয় দিতো। র‌্যাব-১২ থেকে তার র‌্যাব-৫ এ পোস্টিং হয় এবং পরবর্তী সময়ে র‌্যাব-৫ হতে ঢাকায় র‌্যাবে পোষ্টিং হয় বলে তার অনুসারীদের জানাতো।

রাজ ওরফে মো. আব্দুর রাকিব ওরফে খোকনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। সে পূর্বে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করতো বলে জানা যায়। বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সে টিকটকের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চারটি বিয়ে করেছে। এ ছাড়াও শতাধিক নারীকে সে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে।

সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর চিত্র (ছবি) ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করতো এবং ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাককমেইল ও অর্থ আদায় করতো। পূর্বেও তার নামে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত টিকটক রাজ বিভিন্ন টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য ঢাকায় আসে। সে মূলত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থাপনার আশেপাশে টিকটক ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বলেও জানায় র‍্যাব।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ