দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শপথ নিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতিকে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রটোকল অফিসার মুহাম্মদ মামুনুল হক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে শপথবাক্য পাঠ করানোর তথ্য জানানো হয়।
গত ১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। সন্ধ্যায় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন। শপথগ্রহণের তারিখ থেকে তা কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত ১২ সেপ্টেম্বর নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ হতে কার্যকর হবে। তিনি হবেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী’র প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনের সময়সীমা ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। তার বাবা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য। সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএল.এম. ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (অর্থনীতি) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বারের সনদ পেয়ে জেলা বার-কমিটি যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্রঃ একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’এবং 'বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশঃ একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য' নামক দু'টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
বিচারপতি হিসেবে যোগদানের আগে ওবায়দুল হাসান দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং সাংবিধানিক বিষয়াদি সম্পর্কিত মোকদ্দমার একজন দক্ষ আইনজীবী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধানমন্ডি ল' কলেজের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।নয়াশতাব্দী/এমটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ