ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

খুলে ফেলা হলো সেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের নেমপ্লেট!

প্রকাশনার সময়: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:১০
ছবি - সংগৃহীত

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ শতাধিক বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী বরাবর যে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তার বিপরীতে বিবৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানানো সেই ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার কক্ষের সামনের নেমপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এমরান আহম্মদের নেমপ্লেট খুলে ফেলেন আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক।

নেমপ্লেট খুলে ফেলার কারণ প্রসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফজলুল হক বলেন, ‘এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই, একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নেমপ্লেট আমি খুলে ফেলেছি। তার নেমপ্লেট অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে থাকতে পারে না বলেই আমি মনে করি।’

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার নাম সম্বলিত নেমপ্লেটে নেই। তবে তার ডান-বামের অন্যদের নেমপ্লেট রয়েছে। অন্যদিকে ৫১১ নাম্বার কক্ষে থাকা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র সরিয়ে নিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়। যেখানে সোমবার বিকেল ৪টার মধ্যে বিবৃতি স্বাক্ষর করার কথা বলা হয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাক্ষর করব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি স্বাক্ষর করার সাথে একমত নই। আমি মনে করি ড. ইউনুসের বিষয়ে যে বিবৃতি ও পাল্টা বিবৃতি দেয়া হচ্ছে সেটির প্রয়োজন নেই। ড. ইউনূসকে ‘বিচারিক হয়রানি’ করা হচ্ছে। আর আমি মনে করি ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো চলছে তা অন্যভাবে ডিল করা যেত। এটা এক প্রকারে ওনাকে প্রেশারে রাখার জন্যই করা হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। উনি বাংলাদেশের জন্যই যে শুধু সম্মান বয়ে এনেছেন তা কিন্তু নয়, উনি সারা পৃথিবীর জন্য সম্পদ।’

সম্প্রতি বারাক ওবামা ও হিলারি ক্লিনটনসহ বিশ্বের ১৬০ জন সুপরিচিত ব্যক্তি ও নেতা অধ্যাপক ইউনুসের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। একশ’র বেশি নোবেল বিজয়ীর দেয়া ওই চিঠিতে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার বিচারকাজ স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানানো হয়। সেই সঙ্গে ওই চিঠিতে বিগত দুটি নির্বাচনের বৈধতার সংকট ছিলো জানিয়ে সামনের নির্বাচনের দিকে নজর রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এই চিঠির প্রতিবাদ জানিয়ে গত কয়েকদিনে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ দেশের ৫০ সম্পাদক।

৫০ সম্পাদকের বিবৃতি বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের অনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া একটি খোলা চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি একটি সার্বভৌম দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের বিবৃতি বা খোলা চিঠি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

নয়াশতাব্দী/এমটি

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ