আত্মস্বীকৃত খুনিদের যেন কোন দেশ আশ্রয় না দেয় সে জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব তোলা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আত্মস্বীকৃত খুনীদের কোন দেশ যেন আশ্রয় না দেয় সে বিষয়ে দাবি জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘে একটা প্রস্তাব উত্থাপন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত কিছু খুনি বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা একজনকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। কিন্তু এখনও পাঁচজন আত্মস্বীকৃত খুনি বিভিন্ন দেশে রয়ে গেছে।’
গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্রের জন্যে, মানবাধিকারের জন্যে, ন্যায়বিচারের জন্যে, মানবিক মর্যাদার জন্যে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোথাও এতো মানুষ ন্যায়বিচারের জন্যে, গণতন্ত্রের জন্যে, মানবিক মর্যাদা ও মানবাধিকারের জন্যে রক্ত দেয় নাই।
ড. মোমেন ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে জনগণের রায়কে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সুতরাং আমরা যুদ্ধ করেছি গণতন্ত্রের জন্যে। আমরা যুদ্ধ করেছি ন্যায়বিচারের জন্যে। আমরা যুদ্ধ করেছি মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখতে। আমরা যুদ্ধ করেছি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা হিসাবে যা যা করার করে দিয়ে গেছেন। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মাত্র নয় মাসের মধ্যে একটি উন্নত শাসনতন্ত্র দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেছেন। এই সাড়ে তিন বছরে তিনি ১২৬টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ডায়নামিক ও কারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে এদেশে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আবার কাজ শুরু করে। আর ১৩ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আর্থসামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র একটা অভিশাপ। এই দারিদ্রকেও আমরা মোটামুটি অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা দেখেছি দুনিয়ায় যেখানেই সরকার স্থিতিশীল, যেখানে শান্তি বিরাজ করে সেখানে মানুষের মঙ্গল হয় এবং উন্নয়ন হয়।’
ড. মোমেন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রুয়ান্ডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এসব দেশে দীর্ঘদিন স্থিতিশীল সরকার থাকার কারণে অনেক উন্নয়ন করতে পেরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নাই সেখানে উন্নত দেশও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’
ইরাক ও লিবিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব দেশের অবস্থা একসময় অনেক ভাল থাকলেও ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা না থাকায় তারা এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। সুতরাং যেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নাই সেখানে মানুষের কল্যাণ হয় না, মানুষের বড় কষ্ট হয়।’
সবাইকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি যদি আপনার পরিবারের উন্নয়ন চান, আপনারা যদি দেশের মঙ্গল চান, জনগণের কল্যাণ চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই শান্তি ও স্থিতিশীলতার দিকে নজর দিতে হবে।’
ড. মোমেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কর্মীদের দেশে ও বিদেশে যারা গুজব রটায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান। কিছু কিছু লোক দেশে ও বিদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ভঙ্গের জন্য বহুরকমের বানোয়াট গল্প তৈরি করেছে এবং অনেক ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলে গুজব রটাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয়ে সোচ্চার থাকতে হবে।
প্রথমত, দারিদ্র ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন আমরাও এ বিষয়ে সোচ্চার থাকবো।
দ্বিতীয়ত, গুণগত শিক্ষা ও মানব সম্পদের উন্নয়ন।
তৃতীয়ত, মানুষের চাকরি ও কর্মসংস্থান এবং চতুর্থত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এগুলো যদি অর্জন করতে পারি, তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটা বাস্তবায়নের পথেই কাজ করে যাচ্ছেন।
এজন্য আমাদের স্লোগান হবে- ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু।
অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম ঠান্ডু। ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি ড. মশিউর মালেকসহ বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ