আগামী বছরের ১ এপ্রিল হতে সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল ব্যতীত ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে আর কোনও আন্তঃজেলা বাস কাউন্টার থাকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ডিএসসিসি প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির ২৫তম সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে সাথে আলাপকালে মেয়র ও বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এ তথ্য জানান।
মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, আমরা দেখি যে, আমাদের যে বাস টার্মিনালগুলো আছে সেগুলোর কার্যকারিতাকে ঠিকমতো বাস্তব রূপ দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হতে চাই। আমাদের সায়দাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার চলছে। এটা মার্চ মাসের মধ্যে শেষ হবে। আমরা পহেলা এপ্রিলে সেটা উদ্বোধন করব, চালু করবো। আমাদের মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের যে সংস্কার প্রয়োজন আছে, সেগুলোরও আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব এবং সকল উদ্যোগ সম্পন্ন করব। আগামী পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে টার্মিনাল ব্যতীত আর কোথাও কোনও কাউন্টার আমরা রাখতে দিব না।
এ কার্যক্রমের মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা আরও শৃঙ্খলিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, এই সভায় আমাদের মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা আছেন। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা অবগত করতে চাই যে, পহেলা এপ্রিল থেকে ঢাকা শহরে যত্রতত্র কোনও কাউন্টার রাখতে দেওয়া হবে না। আমরা দেখি জিগাতলায় একটা কাউন্টার, কলাবাগানে একটা কাউন্টার, খিলগাঁওয়ে আরেকটা কাউন্টার- যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে কাউন্টার খুলে বসে আছে। এতে যেমনি যানজটের সৃষ্টি করে তেমনি অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। সুতরাং এ বিষয়ে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি। পয়লা এপ্রিল ২০২৩ এর পরে টার্মিনালের অভ্যন্তর ব্যতীত বাইরে কোথাও যত্রতত্র আর কোনও কাউন্টার রাখতে দিব না। কাউন্টার না রাখলে সেখানে বাসও যেতে পারবেনা। রাস্তাও ব্যবহার করতে পারবে না। সকলকেই টার্মিনাল ব্যবহার করতে হবে। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে শুধু যাত্রী সেবা নয়, গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃংখল হবে, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসতে পারবো।
রাস্তার উপর বাস রাখতে কাউন্টার থাকাসহ আরও নানা অযুহাত দেওয়া হলেও তা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, টার্মিনালগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে বাস কাউন্টার সংলগ্ন এলাকায় যত্রতত্র রাস্তা দখল করে বাস রেখে দেওয়া হয়। তখন অজুহাত দেওয়া হয়- এত দূরে কাউন্টার, আমি আবার বাস কিভাবে টার্মিনালে নিব? এখানে দু’টো বিষয়- একটা হলো টার্মিনালকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। দ্বিতীয়ত হলো- বাস মালিকরা যখন বাস নামান তাদের কিন্তু একটা শর্ত পূরণ করার কথা। তাদের বাসগুলো রাখার পর্যাপ্ত জায়গা তাদের রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় যে, সেই জায়গায় সংকুলান না করে তারা রাস্তার উপরে বাসগুলো রাখছে। আমরা এ ব্যাপারে খুব কঠোর হবো। তাদেরকে নিজস্ব জায়গায় বাস রাখতে হবে অথবা টার্মিনালে রাখতে হবে। তারা যত্রতত্র রাস্তার উপরে রাখতে পারবে না এবং বিভিন্ন জায়গায় কাউন্টারের অজুহাত দিয়ে সেখানে বাস রাখতে পারবে না। সকল কার্যক্রমটা একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় টার্মিনালকেন্দ্রিক হতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের মাধ্যমে ঢাকার সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, টার্মিনালগুলোর সামনে বাসগুলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। এর ফলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, শৃঙ্খলা ব্যহত হচ্ছে। ১লা এপ্রিল থেকে কোনও বাস রাস্তায় দাঁড়াতে পারবে না। টার্মিনালের বাহিরে কোন বাস দাঁড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও জায়গায় জায়গায় ছাতার মতো টিকেট কাউন্টার থাকবে না। টার্মিনালের বাহিরে কোন কাউন্টার থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ২১,২২ ও ২৬ নাম্বার রুটে শুধু রুট পারমিটবিহীন বাস নয় নগর পরিবহন ব্যতীত অন্য কোন বাস চলবে না। এই রুটে শুধু নগর পরিবহন চলবে। এটি নিশ্চিত করতে আগামী ২০ডিসেম্বর থেকে ০৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হবে। এমনকি লেগুনাও চলবে না। শুধু নগর পরিবহন চলবে এই তিন রুটে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব আকরামুজ্জামান, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদসহ কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ