ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জামায়াতসহ ৩৩ দলকে পাশে পাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৭:৪৯

এবার আর বিএনপি একা নয়; পাশে পাচ্ছে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে। জামায়াতে ইসলামীসহ ৩৩ দলকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় ধাপের যুগপৎ আন্দোলনের সূচনা করতে যাচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী বিএনপি।

এরই মধ্যে দলটির দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী একই দিন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো একইভাবে বিএনপির কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে। এ ছাড়া সাত দলেরত গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরামের একাংশসহ আরও বেশ কয়েকটি দল যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আজ সকাল ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলগুলোর অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। যদিও এর আগেই যুগপৎ আন্দোলন বিষয়ে সব পক্ষ একমত হয়েছে।

৩৩ দল কারা: যুগপৎ আন্দোলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সাত দলের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, কমরেড সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, ড. রেজা কিবরিয়া ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন রয়েছে।

২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলো হলো- কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বাধীন বিএলডিপি, ড. ফরিদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), বাংলাদেশ জাতীয় দল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাগপা, ন্যাশনাল পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, মাইনরিটি পার্টি, জাগপা (অপরাংশ) রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ২০ দলীয় জোট থেকে এক সময় বেরিয়ে যাওয়া ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরাম।

জামায়াতেরও একই কর্মসূচি: গত শনিবার বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার দিনে জামায়াতেরও একই কর্মসূচি ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ওই দিন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ভার্চুয়ালি দলের ১০ দফা ঘোষণা করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিএনপির ১০ দফার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি, দলীয় কার্যালয় খুলে দেওয়া, নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো কয়েকটি দাবি যোগ করা হয়েছে। সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনসহ বাকি দাবিগুলোয় বিএনপির সঙ্গে পুরোপুরি মিল রাখা হয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধী এই দলটির সঙ্গে জোট করায় দীর্ঘদিন ধরে চাপে রয়েছে বিএনপি। এ পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো সম্পর্ক রাখেনি দলটি। এমনকি ২০-দলীয় জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচিও পালন করা হয়নি। সঙ্গে রাখা-না রাখা নিয়ে প্রায়ই তিক্ততার সৃষ্টি হলেও প্রকাশ্যে জোট ভাঙেনি কোনো পক্ষই। জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কার্যক্রমে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও, জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে কেউ মুখ খোলেনি। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে একই দিন অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করায় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক আবারও সামনে চলে আসে।

জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের বিষয়টি সব সময় অস্বীকার করেছে বিএনপি। তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে যারাই শরিক হবেন, তাদেরই সাধুবাদ জানানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু জানান, জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা কিংবা বৈঠক হয়নি। জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে তাদের নিজস্ব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এটা জামায়াতের দলীয় সিদ্ধান্ত। এখানে কেন বিএনপিকে টেনে আনা হচ্ছে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

তবে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জোটবদ্ধ নয়; যুগপৎ আন্দোলন হবে। ১৯৯০ সালে তিন জোটের সঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন করেছে জামায়াত। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে জামায়াত। এবারও একই ধাঁচে আন্দোলন হবে। তিনি বলেন, একই দিনে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে নিজ নিজ ব্যানারে গণমিছিল করবে বিএনপি ও জামায়াত। কেউ কারও কর্মসূচিতে অংশ নেবে না। বিএনপির কর্মসূচিতে জামায়াতের কেউ প্রতিনিধিত্ব করবে না।

জামায়াত ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে তারা সাধুবাদ জানাবেন। জামায়াতও যদি দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে তাদের মতো করে রাজপথে থাকে, তাতে তিনি দোষের কিছু দেখছেন না।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ