ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্ত এলাকায় ওড়ে স্বাধীন দেশের পতাকা

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:৩৪

একাত্তরের আজকের দিনটি ছিল মিত্রবাহিনীর সামনে শুধুই ঢাকা দখলের লড়াই। সবদিকে দিয়ে মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাইরে থেকে হানাদার বাহিনীর প্রবেশ রুদ্ধ হয়ে যায়। মিত্রবাহিনী একে একে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহ দখলে নিয়ে নেয়। মুক্ত এলাকাগুলোতে সগৌরবে স্বাধীন দেশের পতাকা ওড়ে। এইদিনে সকালবেলা হানাদার বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দফতর ঢাকা থেকে প্রথমবারের মতো জেনারেল নিয়াজী স্বীকার করেন, ‘পরিস্থিতি নিদারুণ সংকটপূর্ণ।’ আকাশে শত্রুর প্রভুত্বের কারণে পুনর্বিন্যাসকরণ সম্ভব নয় বলে একটি সংকেতবাণীও পাঠানো হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। দ্রুত মুক্ত হতে থাকে একের পর এক জায়গা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থেমে থাকেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নেয়। এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হতে আদেশ দেন। উদ্দেশ্য— মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে দেয়া। তবে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ বীর সন্তানদের মনোবল ভেঙে দেয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।

একাত্তরের এই দিনে মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরা কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এখন ঢাকা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি।’ এর আগেই চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। মিত্র ও মুক্তিবাহিনী দ্রুত ঢাকা পৌঁছার লক্ষ্য নিয়ে চারদিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে। মিত্রবাহিনী পাকবাহিনীকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। তাদের আর একত্র হওয়ার সুযোগ নেই বা ঢাকা ফেরার পথ নেই। আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি, চাঁদপুর মিত্রবাহিনীর দখলে। আরেকটি বাহিনী কুষ্টিয়া মুক্ত করে গোয়ালন্দের দিকে। হালুয়াঘাট থেকে এগিয়ে আসা বাহিনীও ময়মনসিংহের দ্বারপ্রান্তে। নৌবাহিনীর গানবোট ঢাকার দিকে। বিমানবাহিনীর আক্রমণও সমানে চলছে।’

এদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. হেনরি কিসিঞ্জার তাকে পরামর্শ দিলেন বঙ্গোপসাগরের দিকে সপ্তম নৌবহরকে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিতে। ইয়াহিয়া খান ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা ভেবেছিল এই সপ্তম নৌবহর আসার কথা শুনে যৌথবাহিনীর মনোবল ভেঙে যাবে। কিন্তু স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে এই কথা জেনে মুক্তিযোদ্ধারা আরও বিপুল উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।

সেদিন বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আরেক মিত্র, তৎকালীন বিশ্বের আরেক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আমেরিকার সপ্তম নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেয়। ফলে সপ্তম নৌবহরের যাত্রা শুরু হওয়ার পরই থেমে যায়। এই শক্তিশালী নৌবহরের গঠন ছিল বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌঅবরোধ ব্যর্থ করা, পাকিস্তানি স্থলবাহিনীর তৎপরতায় সাহায্য করা, ভারতীয় বিমান তৎপরতা প্রতিহত করা এবং মার্কিন নৌসেনা অবতরণ করা।

এদিন জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তানি দলের নেতা মাহমুদ আলী দেশে ফিরে এসে দেখা করেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের উচিত বিশ্ব শান্তির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ভারতের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানো। চীন ও আমেরিকার সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান তাদের নির্ভীক ও ঐতিহাসিক সমর্থনের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ