ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু

প্রকাশনার সময়: ০২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:০২
ছবি - সংগৃহীত

বিএনপির সমাবেশের আগে শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। গতকাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান চলবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বিষয়ে পুলিশের সব ইউনিট ও জেলা পুলিশ সুপারকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এটি রুটিন ওয়ার্ক দাবি করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে এ ধরনের অভিযান চালানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে।

জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন শাখার এক আদেশে দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের এ বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বিবেচনায় এই অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্‌যাপনের নিরাপত্তা নিশ্চিতও এই অভিযানের অংশ। ধারণা করা হচ্ছে, আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারে অপরাধীরা লুকিয়ে থাকতে পারে। এ কারণে এসব স্থানে ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ তারিখ বিশেষ অভিযান চালানো হবে। এছাড়া সন্দেহভাজন বিভিন্ন স্থানেও অভিযান চালানোর পাশাপাশি জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে ওই নির্দেশনায়।

এ বিষয়ে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্দশনা দেয়া হয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহ করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, চলমান অভিযানে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ্য করলেও মূলত বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে এই তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে গত মাসের শুরুর দিকে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা পড়ে পুলিশ সদর দফতরে। সেখানে বলা হয়, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় অরাজকতার সৃষ্টি করতে পারে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদিও বিএনপি সমাবেশের জন্য নয়া পল্টনে আবেদন করলেও পুলিশ ২৬ শর্তে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেয়। কারণ বড় মাঠে পুলিশের পক্ষে নজরদারি করা সম্ভব। কিন্তু নয়াপল্টনের বিএনপি পার্টি অফিসের আশপাশের গলিসহ জনবহুল এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না বলেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার বিভিন্ন মেস, আবাসিক হোটেলে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত সপ্তাহের শেষের দিকে পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও এ বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ওই সভায় দেশের সব ইউনিট ও পুলিশ সুপাররা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। সেখানে অভিযান চালানোর বিষয়ে সবাই একমত হন। এরপর ২৯ নভেম্বর এ বিষয়ে লিখিত আকারে নির্দেশনা জারি করা হয়। সূত্রমতে, এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকার সব আবাসিক হোটেলের তালিকা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। হোটেলে আগতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে। পাশাপাশি মেসগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে বাস, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনগুলোতেও সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ। প্রস্তুত রাখা হবে পুলিশের রায়টকার, জলকামানসহ রিজার্ভ ফোর্স। এছাড়া ওইদিন রাজধানীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সমাবেশ স্থল ছাড়াও বিভিন্ন কেপিআই পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। বাড়ানো হবে টহল ডিউটিও। সাদা পোশাকে তৎপর থাকবে গোয়েন্দারা। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে প্রথমে পুলিশ ধৈর্য ধারণ করবে। তবে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে কঠোর অ্যাকশনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া নয়াপল্টনে ওইদিন কোনোভাবেই বিএনপির সমাবেশ করতে দেয়া হবে না সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। ৮ তারিখ থেকেই বিএনপির পার্টি অফিস ও আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিবে পুলিশ। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্রমতে, ১০ ডিসেম্বর শর্তসাপেক্ষ সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে অনড় থাকার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সমাবেশের নামে ওইদিন তারা ঢাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এ কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সমাবেশে লোকসমাগম কমাতে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেবেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কাউকে ঘর থেকে বের না হওয়ারও অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। পরিবহন চলাচলেও আসতে পারে অঘোষিত বিধিনিষেধ। এছাড়াও মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেবেন। যাতে ট্রাক, পিকআপ ও থ্রি-হুইলারযোগে বিএনপির সমর্থকরা ঢাকায় প্রবেশ করতে না পারে। একই সঙ্গে আগে থেকে যেন নয়াপল্টনে নেতাকর্মীরা অবস্থান না নেয়— সেজন্যও পুলিশের রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।

জানা গেছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় থাকলেও রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ ও রাজনৈতিক সরকারবিরোধী দলগুলো তৎপর। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে পুঁজি করে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ শেষে তারা আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছে। ওই ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এরই মধ্যে ডিসেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়তে পারে বলে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। এতে নাশকতা মামলার আসামিদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এই বার্তা অনুযায়ী এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের যেসব নেতাকর্মীর নামে নাশকতা মামলা আছে তাদের তালিকা আপডেট করা হয়েছে। এরই মধ্যে তালিকাভুক্তদের বিষয়ে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যের ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। এ কারণে ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক সমাবেশকে ঘিরে কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও সমাবেশকেন্দ্রিক কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানের আসে না। তবে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে তাদের বিষয়ে আমাদের অভিযান সব সময়ই চলে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে ধরপাকড়ের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

নয়া শতাব্দী/আরআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ