ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তর ১৯৯২ সালের ১৫ মে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। ওই বছরের ২৪ মে আবেদন করেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মো. এছাক মিয়া। বিজ্ঞপ্তিতে ১৮ বছর বয়স চাওয়া হলেও আবেদনের সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৭ মাস ২৪ দিন। এরপরও চাকরিটি পেয়েছিলেন তিনি! ৩০ বছর ধরে চাকরি করেও যাচ্ছেন।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, এছাক মিয়ার আবেদনপত্র ও তার জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়সের গরমিল থেকে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এসব কাগজপত্র প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। জানা গেছে, বয়সসীমার শর্ত পূরণ না হলেও তখন এছাক মিয়া চাচার সুপারিশে যোগ্যদের পেছনে ফেলে পেয়ে যান সেই চাকরি। তার চাচা মো. জমির ওই সময় ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তরে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন, বর্তমানে অবসরে।
শুধু চাকরিই নয়, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক পদের মতো ছোট পদে চাকরি হয়ে ফুলেফেঁপে হয়েছেন কলাগাছ। বেতন অল্প হলেও চড়েন নিজের গাড়িতে, করেছেন বাড়িও।
নথি যাচাই করে দেখা গেছে, এছাক মিয়া কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মান্দারিয়া গ্রামের মো. আবদুল করিমের ছেলে। তার জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী জন্ম ১৯৭৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর (জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ১৯১৩১৯০৩৪৯৬১৩)। আবেদনের সময়ে তিনিও এই তথ্যই দিয়েছিলেন। এসএসসি ও এইচএসসি পাসের সনদেও তার জন্ম তারিখ অভিন্ন। এরপরও বয়স না হওয়াতে তিনি পেয়েছিলেন চাকরি।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেকোনো সরকারি চাকরির জন্য আবেদনের সময় হচ্ছে ১৮ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত। ১৮ বছরের নীচে কেউ সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করার যোগ্যতা রাখেন না। শিশুশ্রম আইনের সঙ্গেও বিষয়টি সাংঘর্ষিক। এতদিন ধরে চাকরি করলেও এই ৩০ বছরে কোনো কর্মকর্তার নজরে আসেনি যে সরকারি বিধিমালা ভঙ্গ করে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন এছাক।
এছাক মিয়ার সহকর্মী আর তার এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ ছোট হলেও এই সরকারি চাকরি করে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ। এলাকায় কিনেছেন বিঘায় বিঘায় জমি। আইন ভঙ্গ করে সরকারি চাকরি করলেও কাউকে তোয়াক্কা করেন না তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে মো. এছাককে বারবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে ফোন করলে অন্য কাউকে দিয়ে তিনি ফোন রিসিভ করান। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে নিজের পরিচয় না দিলে বলেন, ‘এছাক সাহেব অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি।’ যদিও নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি সুস্থ রয়েছেন।
এছাক মিয়া যখন চাকরিতে আবেদন করেন, তখন সরকারি প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর। এখন সেটি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হয়েছে। বয়স কম হলেও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেলেন কীভাবে, তা জানতে ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘বিষয়টি অনেক আগের, তাই এ সংক্রান্ত তথ্য না দেখে বলা যাবে না।’
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ