পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ গত আড়াই মাসে কোনো পাসপোর্ট ছাপাতে পারেনি। চলতি বছরের জুন মাসে পাসপোর্ট অধিদফতরের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সার্ভারের (এমআরপি) ধারণ ক্ষমতা তিন কোটির বেশি সীমা পার হয়।
এ কারনে পাসপোর্ট প্রিন্ট বন্ধ। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ সব দেশেই প্রবাসীরা এ সমস্যায় পড়ছেন।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের হতাশা ও ক্ষোভ
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি অভিবাসীরা তাদের হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, এক কোটিরও বেশি অভিবাসী বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখে। কিন্তু, তাদের সমস্যাগুলো কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করছে না।
মালয়েশিয়া প্রবাসী ওয়াহিদ নিজাম জানান, পাসপোর্ট পেতে চার থেকে ছয় মাস সময় লাগছে। এতে, প্রবাসীরা অনিশ্চয়তা আর মালয়েশিয়ান পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে আছেন।
তিনি জানান, 'সময়মত পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে আমরা অনেকেই কাজের অনুমোদন নবায়ন করতে আবেদন জমা দিতে পারছি না। এমনকি যারা নথিভুক্ত নন, তারা সাধারণ ক্ষমা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াতেও আবেদনপত্র জমা দিতে পারছেন না।'
সিঙ্গাপুরে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক রশিদুল ইসলাম জানান, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তিন থেকে চার মাস পরেও পাসপোর্ট না পাওয়ায় তারা উদ্বেগের মধ্যে আছেন।
সৌদি আরবে কর্মরত এক বাংলাদেশি অভিবাসী জানান, তারা দূতাবাসের কাছ থেকে পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ইকামা (বসবাসের অনুমতি) নবায়ন করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ মিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এমআরপি সার্ভারের ওপর চাপ এবং মহামারির কারণে দেরি হওয়া ছাড়াও অন্য আরেকটি কারণে দেরি হতে পারে। পাসপোর্টের দালালরা অথবা অভিবাসীরা নিজেরাই হয়তো ঠিকমত অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করেননি।
মালয়েশিয়া ভিত্তিক প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা কর্মী হারুন আল রশিদ বলেন, 'ডিআইপি সার্ভারের ধারণক্ষমতা অতিক্রমের বিষয়টি কেন বুঝতে পারেনি। কেন তারা এ বিষয়টির সমাধানে কোন উদ্যোগ নিলো না? এটা কল্পনার বাইরে।'
তিনি বলেন, 'এখন অনেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রবাসীদের যে কোনো সময় হাজতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, কারণ তাদের অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করতে পারেনি। যদি তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয় বা তারা তাদের চাকুরি হারান, তাহলে কে সেটার ক্ষতিপূরণ দেবে?'
এই পরিস্থিতিতে একের পর বিভিন্ন দূতাবাস থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রবাসীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের (এমআরপি) কাজ পেয়েছিল মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান আইরিস করপোরেশন। সেখানে তিন কোটি পাসপোর্টের চুক্তি ছিল। সেই তিন কোটি আঙুলের ছাপ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পাসপোর্ট ছাপা বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে সার্ভারের ত্রুটির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের পাসপোর্ট সেবা সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সেখানকার হাইকমিশন। সংকট সমাধানে পুনরায় আইরিস করপোরেশনের সঙ্গে আরও ৬০ লাখ এমআরপির বিষয়ে চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের নতুন মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী বলেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ব্যবস্থাকে আপগ্রেড করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার একটি সংস্থার সঙ্গে আমাদের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। সার্ভার আপগ্রেড হওয়ার পর জমা থাকা আবেদনপত্রের ভিত্তিতে পাসপোর্ট ছাপানো হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ই-পাসপোর্ট চালু করতে পারিনি বিধায় এমআরপি চালাতে হচ্ছে। এটা তো জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছি। অনেক কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই অতিরিক্ত সবকিছু বাড়াতে হবে। পাসপোর্ট আমরা ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছি, মেইনটেন্যান্স কন্ট্রাক্টও বাড়িয়ে ফেলছি। এটার যেসব জিনিস লাগে জার্মানি থেকে সেগুলো কিনেছি।
এ অবস্থায় সৌদি আরবে সমস্যাটা বেশী, কারন সেখানে সর্বাধিক বাংলাদেশী কাজ করেন। গত ২৮ জুন লেবাননের বৈরুতে দূতাবাসে প্রবাসীদের উদ্দেশে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট সার্ভারে সাময়িক সমস্যার কারণে দূতাবাসে যেসব পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জমা দেওয়া হয়েছিল, সেসব পাসপোর্ট প্রস্তুত বিলম্ব হবে।
গত ১১ জুলাই কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে সব প্রবাসী ২২ মে থেকে আবেদন জমা দিয়েছেন, তাদের পাসপোর্ট বিতরণ সার্ভারের ত্রুটি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
গত ৭ আগস্ট মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারের ধারণ ক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে। যার কারণে পাসপোর্টের আবেদন পাইপলাইনে জমা আছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস গত ৬ আগস্ট, মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশন ৯ আগস্ট, গত ৫ আগস্ট জাপানের দুতাবাস এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেয়।
এদিকে আমেরিকায় পাসপোর্ট ইস্যু সংকট সমাধান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রক্রিয়াকৃত ১৩৬৪ টি আবেদনের বিপরীতে ইতোমধ্যেই ১১০১টি পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়েছে। প্রস্তুতকৃত এসব পাসপোর্ট অনতিবিলম্বে ফেডেক্সের মাধ্যমে দূতাবাসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ