বাংলা কার্তিক মাসে নভেম্বরের শুরুতেই প্রকৃতিতে কিছুটা শীতের আগমনি বার্তা পাওয়া যাচ্ছিল। রাতের তাপমাত্রা কমে অগ্রহায়ণের আগমনের সঙ্গে প্রকৃতি জানান দিয়েছে শীত এসেছে। ফলে গ্রামাঞ্চলে সকালে ও রাতে ঠান্ডা হিমেল অনুভূতি পাকাপোক্ত হয়েছে। তবে শহরাঞ্চলে পুরোপুরি শীতের দেখা এখনও তেমন পাওয়া যায়নি। কিন্তু শীতের আবহেই রাজধানীর বাজারে কদর বেড়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, রেডিমেড ব্লেজার, শাল চাদর, হুডি, মোটা গেঞ্জিসহ অন্যান্য গরম পোশাকের।
রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মার্কেট, বিপণি বিতানসহ ফুটপাতে এখন শীতের গরম কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা চলছে। ক্রেতারাও দেখেশুনে নিজের এবং পরিবারের জন্য কেনাকাটা করছেন। অপরদিকে ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা সাধ্যানুযায়ী ছুটছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার গ্লোব শপিং সেন্টার, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে গ্লোব শপিং সেন্টারে দেখা মিলল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রবিন ও সজীব নামের দুই শিক্ষার্থীর। বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরে দেখছিলেন শীতের সোয়েটার এবং জ্যাকেট। তারা বললেন, শীতের পোশাক কিনতে আসিনি। শুধু দেখে পছন্দ করতে এসেছি। সাধারণত শীতের জ্যাকেট একবার কেনা হলে পরের এক-দুই বছর আর কেনা হয় না। তাই দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে এবং দেখতেও বেশ সুন্দর হবে এমন একটি জ্যাকেট চাই।
সরজমিন ঘুরে আরও দেখা যায়, সাধারণত বিভিন্ন ছোট মার্কেট ও ফুটপাতে কাপড়ের দাম শুরু হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর বড় মার্কেটে জ্যাকেট বা সোয়েটারের দাম সর্বনিম্ন ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে শুরু হচ্ছে। তবে দোকান, ব্র্যান্ড ও কাপড়ের গুণগতমান ভেদে রয়েছে দামের ভিন্নতা ও ফারাক। নুরজাহান সুপার মার্কেটের জেমি ফ্যাশনের বিক্রেতা জালালুদ্দিন বলেন, এবার আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রতি দোকানেই নতুন করে অনেক টাকা লগ্নি করা হয়েছে। এ বছর শীত বেশি পড়বে এমন খবরে আগের তুলনায় অনেক পোশাক তোলা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় দামও বেড়েছে প্রায় ২০-৩০ শতাংশ। হাতাওয়ালা টি-শার্ট, শীতের টুপি, জ্যাকেট, ডেনিম শার্ট, হুডিসহ বিভিন্ন কালেকশন রয়েছে। ব্র্যান্ডের মধ্যে দোকানে রেড টেপ, সিকে, কেলভিন, পোলো, ডেনিম, ডমির বিদেশি জ্যাকেটগুলো এসেছে। নিউমার্কেটের অধিকাংশ শীতের কাপড়ের দোকানই খুচরা বিক্রির দোকান। এবার বেশি দামেই জ্যাকেট সোয়েটার আনতে হয়েছে। ফলে খুচরা বাজারেরও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। বিক্রেতারা আরও জানান, শুধু ছেলেদের উপযোগী শীতের পোশাকই নয় বরং মেয়েদের জন্যও রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কালেকশন। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরার জন্য রয়েছে লং জ্যাকেট, পঞ্চ, মোটা কাপড়ের টপস ও কার্ডিগেন। শাড়ির সঙ্গে পড়ার জন্য রয়েছে পাতলা শালের চাদর, ফুলস্লিভ ব্লাউজসহ বিভিন্ন হাতা কাটা সোয়েটার। রয়েছে পশমী বা উলের ট্রাউজারও।
অপরদিকে এখন মার্কেটে যেসব ক্রেতা আসছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রামের পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনদের জন্যই কেনাকাটা করছেন। শামীম হোসেন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ছুটিতে গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় যাবেন। তাই বাবা-মা ও পরিবার-পরিজনদের জন্য শীতের কাপড় কিনেছেন তিনি।
তহুরা খাতুন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, শীত মাত্র শুরু হচ্ছে। তাই সোয়েটার আর জ্যাকেটের চাহিদা বেশি। বিক্রেতারা ঠিক এই সুযোগটাই নিচ্ছেন। আগের তুলনায় অনেক বেশি দাম চাইছেন তারা। ছোট বাচ্চাদের সোয়েটার যেগুলো গত বছর ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যেত সেগুলো এখন ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা দাম চাইছেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ