বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশপথে প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণের অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসছে। ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে এই স্বর্ণের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও বাজুসের এক বৈঠকে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বৈঠকে জুয়েলারি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই শিল্পে স্বর্ণ চোরাচালান বড় ধরনের সংকট ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরাচালান শুধু দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে না। এর ফলে অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে।
বৈঠকে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন সংক্রান্ত আর্থিক অপরাধ মোকাবিলায় ‘মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২’, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯’ এবং এতদসংক্রান্ত বিধিমালার আওতায় সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার দায়-দায়িত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিএফআইইউ’র প্রধান বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের মতো আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। তিনি বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে বিএফআইইউ’র ভূমিকা অবহিত করেন। সভায় বাজুসের প্রেসিডেন্ট জুয়েলারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহূত না হতে পারে, সে লক্ষ্যে সব জুয়েলারি ব্যবসায়ী সম্মিলিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন। বৈঠকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৭টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে।
বাজুসের সাত দফা প্রস্তাবনা হলো- ১. স্বর্ণ চোরাচালান ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ এবং চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাজুসের সমন্বয়ে যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করা। ২. চোরাকারবারিরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা। ৩. স্বর্ণ চোরাচালান প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন- বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের জোরালো অভিযান নিশ্চিত করা। ৪. চোরাচালান প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সদস্যদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৫. ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণের বার ও অলংকার আনার সুবিধার অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান ও মানিলন্ডারিংয়ে কী প্রভাব পড়ছে, তা নিরূপণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করা। ৬. অবৈধ উপায়ে কোনো চোরাকারবারি যেন স্বর্ণের বার বা অলংকার দেশে আনতে এবং বিদেশে পাচার করতে না পারে, সে জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। ৭. জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে কেউ যাতে স্বর্ণের বার বা অলংকার আনতে না পারে, এ জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ