ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন

ভূমিহীনদের উচ্ছেদ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের বিচার দাবি

প্রকাশনার সময়: ১৯ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৪২

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষ করে সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালী শেখ মুজিব নগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ সহস্রাধিক ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে। গুলি ও অগ্নিসংযোগ করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। ভূমিহীন নারীদের শ্লীলতাহানি ঘটিয়েছে। এ সকল ঘটনার বিচার দাবি করেছে খলিশাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের ভূমিহীনরা।

শনিবার (১৯নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে তারা অসহায় ভূমিহীনদের জানমাল রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এসময় বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ভূমিহীনদের নামে খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী পূনর্বাসনের দাবি জানান।

সমাবেশে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির কো-চেয়ারপার্সন সানজিদুল হাসান। ভূমিহীন নেতা আবুল হোসেন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন খলিশাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রের ভূমিহীন সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম, কমলেশ মণ্ডল, সজল আহমেদ, খাদিজা বেগম, তৌহিদুল ইসলাম প্রমূখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন ৪৩৯ দশমিক ২০ একর জমিতে তারা দখল নিয়ে সহস্রাধিক পরিবার ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে বসবাস করা শুরু করে। এরপর ওই জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ পেতে এবং যাতে কেউ তাদের বসবাসে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে এ জন্য হাইকোর্টের রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলরুজ্জামানের সমন্বয়ে বেঞ্চ ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসের জন্য জমিতে যে যে অবস্থায় আছে তারা সেই অবস্থায় থাকবে মর্মে আদেশ দেয়। একই আদালত ৩১ আগস্ট থেকে এ স্থিতিশীল অবস্থার আদেশ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। এরপরও প্রশাসনের সহায়তায় সেখান থেকে তাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ জন্য পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কথা বলে মালিক নামধারী ভূমি দস্যুদের কাছ থেকে দুই কোটি ৬০ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সালাম গাজীর ছেলে আব্দুল আজিজ।

বক্তারা বলেন, গত ১৬ নভেম্বর জমির মালিক দাবিদার প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে এক হাজারের বেশি লাঠিয়াল মাথায় লাল কাপড় বেঁধে খলিশাখালি শেখ মুজিবনগর ভূমিহীন আবাসন কেন্দ্রে সশস্ত্র হামলা চালায়। এর আগে তারা ভূমিহীন জনপদে ত্রাস সৃষ্টির জন্য মুহু মুহু বোমা ও গুলি ছোঁড়ে। তারা সাত শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাঠ করে। গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায় হামলাকারিরা। এ সময় পুলিশ দূরে দাঁড়িয়ে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি ঘটনার পর অভিযোগ করা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, খাস জমি মুক্তিযোদ্ধা ও ভূমিহীনদের মধ্যে অগ্রধিকার ভিত্তিতে বন্দোবস্ত দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ভূমিহীনদের আশ্রয়স্থল খলিশাখালীর খাস জমি দখলে নিয়ে মাছ চাষ করতে চায় ভূমি দস্যুরা। এরআগে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ওই খাস জমি প্রভাবশালীমহল অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলো। যা উদ্ধার করে রিসিভার নিয়োগের জন্য ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরা জজ আদালতে আবেদন জানানো হয়। এরপর আদালতে দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে ওই জমি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আদেশ দেন। এরপর ভূমিহীনরা সেখানে আশ্রয় নেয়।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ