আজ ভয়াল ১২ নভেম্বর। ১৯৭০ সালের এই তারিখে উপকূলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঘুর্ণিঝড় গোর্কি। সেই রাতে গোর্কির ধ্বংসলীলায় প্রাণ হারান প্রায় ১০ লাখ মানুষ। অসংখ্য গবাদি পশুর প্রাণহানির পাশাপাশি ঘর-বাড়িসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয় লাখ লাখ মানুষ। ভয়াল সেই দিনের দুর্বিষহ স্মৃতি স্মরণ করে আজও আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী।
পাকিস্তানের সরকারী হিসাব অনুযায়ী বৃহত্তর পটুয়াখালী জেলায় (বরগুনাসহ) সেদিন রাতে প্রাণ হারান ৪৮ হাজার মানুষ। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বাস্তবে প্রাণহানির সংখ্যা লাখেরও বেশি। এছাড়া ওই সময়ের দ্বীপ সমৃদ্ধ জনপদ পরিনত হয় জনশুন্য বিরান ভূমিতে। ঘর-বাড়ি, ফসলসহ সম্পদহানি হয় শত-সহস্র কোটি টাকার। খাল, বিল, নদী-নালা, জলাশয়ে ছিলো লাশের মিছিল।
কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার সদর ইউপির সত্তরোর্ধ্ব নুরু উদ্দিন মোল্লা জানান, দিনটি ছিলো বৃহস্পতিবার। সেদিন দিনভর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো। বিকালের দিকে বাতাস বাড়তে থাকে। রাতের দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রচার করতে থাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত। কিন্তু আমরা তখন এ সতর্কবাণী পাইনি। কারণ তখনকার যুগে টিভি বা মোবাইল ছিলো না। গভীর রাতে বাইরে প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইতে থাকে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই তীব্র গতিতে জোয়ারের তোড়ে আমাদের বাড়ির উঠান, ঘর ডুবে আসবাবপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবাই ছোটাছুটি করতে থাকে। আমরা পরিবারের সবাই ঘরের চালের উপরে আশ্রয় নিয়ে কোনমতে প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু আমাদের গরু, মহিষ এবং হাঁস-মুরগী সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সকালে নদী এবং খাল বিলে মানুষের মরদেহ ভাসতে দেখি।
তিনি বলেন, অনেক মানুষ মারা গেছে। তখন এলাকায় ভালো কোন সাইক্লোন শেল্টারও ছিলোনা। যার কারণেই বেশি মানুষ এবং গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে।
কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, এখন সাগরে কোন লঘুচাপ বা নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার আগেই আমরা খবর পাই। দেশে ব্যাপক সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে। এছাড়া আমাদের ব্যাপক ভলান্টিয়ার রয়েছে। দুর্যোগ মুহুর্তে সবাইকে সতর্ক করা এবং জানমাল রক্ষায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ