বারবার সাবধান করার পরও অনেকে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভা নিধনে সচেতন হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ফলে এখন থেকে কোথাও এডিসের লার্ভা পেলে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরসহ ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ দিন মেয়র ‘১০টায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসা-বাড়ি করি পরিষ্কার’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রমেও অংশ নেন। একই সময় দ্বিতীয়বার লার্ভা পাওয়ায় দুটি নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ দেয় ডিএনসিসি।
মেয়র আতিক জানান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি পরিচালনা করছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছি।
বারবার সাবধান করা হলেও অনেকে সচেতন হচ্ছে না। আগেও কয়েকবার এই নির্মাণাধীন ভবনে সাবধান করা হয়েছে। সাবধান করে দেওয়ার পরও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। তারপরও দেখছি বেসমেন্টে অসংখ্য লার্ভা। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। আমরা দুটি ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
লার্ভা পেলে কোনো ছাড় নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, অভিযান চলমান থাকবে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। জনগণ সহযোগিতা না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না।
আতিকুল ইসলাম জানান, জনগণের সহযোগিতায় মাত্র ১২ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছি। অতএব জনগণ চাইলে ডেঙ্গুও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। ছাদ বাগানকে আমরা উৎসাহিত করছি। ছাদ বাগানের জন্য পুরস্কারও দেব। কিন্তু নিয়ম মেনে করতে হবে। ছাদ বাগানে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় সম্পর্কে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, সবাইকে জানাতে হবে ড্রেন বা নর্দমার পানিতে কিন্তু এডিস মশার জš§ হয় না। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই এডিসের লার্ভা জš§ায়। নিজেদের বাসাবাড়িতে ফুলের টব, অব্যবহƒত টায়ার, ডাবের খোসা, চিপসের খোলা প্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের খোলা পাত্র, ছাদ কিংবা অন্য কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। জমে থাকা স্বচ্ছ পানি ফেলে দিন। শিশুদেরকেও এ বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে।
এ সময় সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, সচেতনতা কার্যক্রম ও অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি আমরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রদান করছি। ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ডিএনসিসির ৪৬টি মাতৃসদন কেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পরে ডিএনসিসি মেয়র নিজে ট্রাকে চড়ে মাইকিং করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সচেতন করেন। পাশাপাশি উত্তরা এলাকার কয়েকটি রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জনগণের সঙ্গে কথা বলেন এবং ডেঙ্গু সচেতনতা বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করেন।
স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। এ সময় দুটি নির্মাণাধীন ভবনে অসংখ্য লার্ভা পাওয়া যায়। পরে মেয়রের উপস্থিতিতে ডিএনসিসির অঞ্চল-৬ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দুটি ভবনকে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সেই সঙ্গে ভবনদুটির নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) থেকে ভবিষ্যতে এই ভবনে লার্ভা জš§াতে দেওয়া হবে না প্রেক্ষিতে অঙ্গিকারনামা জমা না দেওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছেন ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরীন।
ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রমে অন্যদের মধ্যে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ শরীফুর রহমান, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর জাকিয়া সুলতানা ছাড়াও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কর্মসূচি পরিচালনা করা হচ্ছে। পুরো নভেম্বর মাসজুড়ে চলবে এই কর্মসূচি।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ