দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সম্মেলন। ইতিপূর্বে কাঙ্খিত পদ না পেয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলেও সম্মেলন উপলক্ষে সকলেই একত্রিত হয়েছেন। সভাপতি ও সম্পাদক পদে পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া ঈদগাহ মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সকালে সম্মেলনের উদ্বোধন ও আলোচনা সভা শেষে দুপুরের পর কাউন্সিলদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।
জেলা বিএনপি সূত্র জানায়, সর্বশেষ সন্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালে। তারপর তিন দফা দলটির জেলা কমিটির গঠন হয়েছে সন্মেলন ছাড়া। কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি সকল উপজেলা ও পৌর কমিটির সন্মেলন শেষ করেছে। সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর জেলা বিএনপিতে দুটি ধারার সৃষ্টি হয়। একটি ধারার নেতৃত্বে রয়েছেন জেলার আহ্বায়ক আহমেদ আযম খান। অপর ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বেশির ভাগ উপজেলা ও পৌরসভায় এবার আহমেদ আযম খানের অনুসারীরা নেতৃত্বে এসেছে।
এবার সন্মেলনে আহমেদ আযম খানের অনুসারীদের পক্ষ থেকে সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুজ্জামিল শাহীন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে অপর যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ ইকবাল প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে আহমেদ আযম খান বিরোধীদের অংশ থেকে সভাপতি পদে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হচ্ছেন, দলের জেলা শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক এবং জেলা শাখার সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী ইমাম তপন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা শাখার সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক ওরফে সানু।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের দলীয় কার্যালয়সহ পুরো জেলায় জনবহুল স্থানগুলোতে পোস্টার ব্যানার টানিয়েছেন। নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। পুরো জেলাজুড়ে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে ভোটের আমেজ বিরাজ করছে।
সভাপতি প্রার্থী হাসানুজ্জামিল শাহীন বলেন, আমি উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিলদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং আমার প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ভালো সাড়া পাচ্ছেন। কাউন্সিলদের ভোটে তিনি সভাপতি হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
সভাপতি প্রার্থী ছাইদুল হক বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমি বিএনপির রাজনীতি করছেন। ১/১১ পরবর্তী দুঃসময়ে দলের জন্য কাজ করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে সবসময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছিলেন। তাই কাউন্সিলরা তার মূল্যায়ন করবে বলে তিনি আশা করেন।
কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, নির্বাচনের ২ হাজার ৩২৩ জন কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ৪ নভেম্বর আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক ও মাহমুদুল হককে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নেতৃত্বে দুটি ধারা তৈরি হয়। গত ৩ আগস্ট পুরনো আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ওই কমিটিতে আহমেদ আযম খানকে পুনরায় আহ্বায়ক করা হয়। কিন্তু সদস্য সচিবসহ কয়েক জন জ্যৈষ্ঠ নেতা বাদ পড়েন। এ নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। আহমেদ আযম খান বিরোধীরা সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ছাইদুল হক ও সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। এ বিরোধের অংশ হিসেবেই আগামী ১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সন্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চেয়ে আদালতে গত ২৬ অক্টোবর মামলা করেছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে পর দিন তিনি মামলা প্রত্যাহার করেন।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ