ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
আক্রান্তের হার বৃদ্ধি, শয্যা সংকট

করোনার দিশেহারা রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ

প্রকাশনার সময়: ০৫ জুন ২০২১, ১৪:৪৪

রাজশাহী অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে রোগী নিয়ে চরম হতাশায় স্বজনরা।

সর্বশেষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়। এর আগেরদিন বৃহস্পতিবার গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ রোগীর মৃত্যু হয়। আবার হাসপাতালে রোগী বাড়ার সাথে সাথে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার বেড়েছে। শুক্রবার রাজশাহীতে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৪৯.৪৩ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এদিন শনাক্তের হার ৬১.৮৭ শতাংশ। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে শনাক্তের হার ছিল ২৬ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছিলো ৫৩.৯৪ শতাংশ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, রাজশাহী অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, শুক্রবার রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে পরীক্ষার পর রাজশাহীসহ তিন জেলার ২৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার ১৩১ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১১২ জন এবং নাটোরের চারজন। এইদিন দুটি পিসিআর ল্যাবে ৪৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, শুক্রবার রাতে রাজশাহীর ২৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩১ জনের পজিটিভ আসে। ফলে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১২ জনের করোনা পজিটিভ হয়। এখানে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এছাড়াও নাটোরের ৯ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করে ৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ জন এবং রাজশাহীর ৩ জনসহ রামেকে মোট আটজনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। বাকি চারজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডগুলোতে ২২৪ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। হাসপাতালে করোনা ইউনিটে মোট শয্যার সংখ্যা ২৩২টি। আর মাত্র কয়েকটি শয্যা রয়েছে। ফলে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যারও সংকট দেখা দিয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। কোনোভাবেই বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরের রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চাঁপাইবাবগঞ্জে চলছে দুই সপ্তাহের কঠোর আঞ্চলিক লকডাউন। এরপরও সেখানে থেমে নেই করোনার ভারতীয় ধরন শনান্তের হার। এছাড়া ঝুঁকি এড়াতে নওগাঁতেও আঞ্চলিক লকডাউন দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতেও চলছে চলাচলের ওপর নতুন বিধিনিষেধ। রাজশাহীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে নগরীতে দোকানপাট বন্ধ করা হচ্ছে। মানুষের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। কিন্তু কঠোরতার পরিমাণ কম সময়ের জন্য। তাই রাজশাহীতে করোনা বৃদ্ধির হার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই।

এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগী নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ছুটে আসছেন স্বজনরা। কিন্তু পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় সব রোগীকে ভর্তি নিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধুমাত্র যাদের অক্সিজেনের স্যাচুরেশন কম, কেবল তাঁদেরই হাসপাতালে ভর্তি নেয়া হচ্ছে। তা সত্বেও হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগী মারা যাচ্ছেন।

হাসাপাতালে প্রতিদিন এত বিপুল পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য রোগীদের জায়গা সংকুলানই একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে কয়েকদিনের সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে।

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ রামেক হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা এক হাজার ২০০টি। এরমধ্যে ২৩২টি শয্যা করা হয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য। এছাড়া বার্ন ইউনিটসহ কয়েকটি ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। এতেও হাসপাতালে জায়গা সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছে না। ১৫টি বেড রয়েছে আইসিইউতে। কিন্তু আইসিইউ কখনো ফাঁকা থাকছে না। আইসিইউ না পেয়ে রোগীর মৃত্যু আরও বাড়ছে।

রামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, রামেক হাসপাতাল ছাড়া রাজশাহীতে আর কোন হাসপাতালে ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নেই। তাই করোনার চিকিৎসার জন্য রামেকে ভিড় বাড়ছে। সব রোগীর চাপ রামেক হাসপাতালে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের রোগীরা এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। ফলে হাসপাতালে জায়গা সংকুলানই বড় সমস্যা হয়ে পড়েছে।

তিনি জানান, রাজশাহী সদর হাসপাতালটি চালু করা গেলে রামেক হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড সেখানে স্থানান্তর করা সম্ভব হবে। তাহলে রামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বাড়ানো যাবে। সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নেই বলে সেখানে করোনার চিকিৎসা হবে না। সর্বশেষ রামেক হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা ওয়ার্ড করার চেষ্টা চলছে। এখন সাধারণ রোগী অন্যত্র না সরালে রামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।

এছাড়া রামেকে কোভিডের চিকিৎসায় চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। রামেক কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ১৫ জন চিকিৎসককে রামেকে দিয়েছেন। তবে তাঁরা এখনও আগের কর্মস্থলে আছেন। দ্রæত তারা হাসপাতালে আসলে হয়ত সংকট কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসাথে নার্সের সংকট দেখা দিয়েছে হাসপাতালে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ