ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় ‘ছাড়’

প্রকাশনার সময়: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০৮:০৯

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর তাগিদ দিয়েছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ শুরুতেই পুলিশ অ্যাকশনে গেলে যদি হতাহত হয় তাহলে তার দ্বায়ভার পুলিশের ওপর চাপিয়ে নতুন নতুন কর্মসূচি দিতে পারে দলগুলো। পাশাপাশি আন্দোলনের নামে দেশে বিশৃঙ্খলাও তৈরি করার শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এ ধরনের একটি প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা আইন ও বিধি অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব পালন করব। পুলিশ এখন আগাম তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে দেশে তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ডিসেম্বর মাসে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। ওই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আমাদের প্রস্তুতি শুরু করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি না হয় সে ব্যাপারে আগাম ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা যেহেতু আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, তাই আশা করছি সব ধরনের আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে। তারপরও যদি কেউ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে চায় তাকে ছাড় দেয়া হবে না। আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে, কে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী আমরা তা বিবেচনা করব না।’

তিনি বলেন, ‘যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আমাদের কাছে সন্দেহ হচ্ছে, এরই মধ্যে তাদের গতিবিধি এবং সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করছি। তাদের বিষয় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে কেউ যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটনার অপচেষ্টা করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি।’

জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে পুলিশি অ্যাকশনে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নূরে আলম ও যুবদল নেতা আবদুর রহিম পুলিশের গুলিতে নিহত হন। একইভাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল কর্মী শাওন প্রধানও নিহত হন। তবে মুন্সীগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন নিহতের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রয়েছে পুলিশ ও বিএনপির পক্ষ থেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির ছোড়া ইটের আঘাতে নিহতের দাবি করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে পাল্টা দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব কর্মসূচিতে আহতের ঘটনাও রয়েছে অনেক।

এমন পরিস্থিতিতে কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় থাকলেও রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ নানা জনসম্পৃক্ত ইস্যুকে পুঁজি করে বিএনপি ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা ডিসেম্বর মাসকে টার্গেট করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের চেষ্টা চালাচ্ছে।

নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যহত রেখেছেন। এজন্য তারা পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ‘পরিপ্রেক্ষিত’ অংশে বলা হয়েছে, সামনের নির্বাচনে বিজয় লাভের টার্গেট করে দলটিকে (বিএনপি) তৃণমূল পর্যায় থেকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তারা আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করতে এবং নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে সিরিজ বৈঠক, রাজনৈতিক সংলাপ, ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করাসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও কৃষকদলের কমিটি গঠন অব্যাহত রেখেছে। ঢেলে সাজানো হয়েছে বিএনপির মিডিয়া সেল। ওই সেলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সমমনা সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন।

জামায়াতে ইসলামিও তাদের বিভিন্নস্থানে গোপন বৈঠক বিক্ষোভ, ঝটিকা মিছিল ও লিফলেট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। তারাও আন্দোলন জোরদার করে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। আন্দোলনের কর্মকৌশল ঠিক করতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক, রাজনৈতিক সংলাপ এবং ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি নতুন নতুন কমিটি গঠন করছে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। তারা প্রায় প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের মাঠে নিয়ে নানা ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে।

কর্মসূচি পালনের সময় নেতাকর্মীদের আগ্রাসী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এবং যে কোনো কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনের লক্ষ্যে দল গোছানো, রাজনৈতিক ঐক্য ও মানবাধিকার ইস্যুকে কাজে লাগানোর কৌশল হিসেবে কাজ করছে।’

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ ধরনের কর্মসূচিতে বিএনপির আগ্রাসী মনোভাবের সময় যদি পুলিশ অ্যাকশনে যায় তাহলে নতুন ইস্যু তৈরি করে তারা আবারও কর্মসূচি দিতে পারে।’

ওই প্রতিবেদনের ৭ সুপারিশে বলা হয়, ‘বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়িত্ব পালনকালে সর্েবাচ্চ সংযম প্রদর্শন করা। যাতে দলগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আন্দোলনের ইস্যু তৈরির সুযোগ না পায়। বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গতিবিধি যাবতীয় কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রাখাসহ নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতা বা মারমুখী আচরণ লক্ষ করা গেলে তাদের নিবৃত্ত বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণসহ যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়াও বামদলগুলো ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জনগণকে সরকারবিরোধী মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকা। যে সব এলাকায় জামায়াত-শিবিরের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী ও নেতাকর্মীদের আবাসস্থল রয়েছে ওই সব এলাকা চিহ্নিতপূর্বক তাদের নিবিড় নিরীক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন এবং বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারি বৃদ্ধি করা।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ