জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দল বুধবার (২৬ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী নেতারাই দলটি গঠন করেছেন। এর প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন ছিলেন ঢাকার ডেমরা থানা জামায়াতের আমির। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ডেমরা চিনিই না।’
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমরা বিডিপির নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধনের যতগুলো শর্ত আছে সবকিছু পূরণ করেই আবেদন জমা দিতে এসেছি। আশা করি, আমরা ইসিতে নিবন্ধিত হবো। এবং আমরা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হবো। আমার সঙ্গে নতুন প্রজন্মের যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা, তারা আছেন। আমরা ইনশাআল্লাহ আরেকটু অরগানাইজড হয়ে আপনাদের সঙ্গে দলের উদ্দেশ্য, আদর্শ সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।
তিনি বলেন, আমরা নিবন্ধনের জন্য এসেছি। নিবন্ধনের যতগুলো রিকয়ারমেন্ট আছে সবগুলো ফুলফিল করে জমা দিয়েছি। প্রায় ৫০ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট এনেছি।
‘জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কী আপনাদের’ এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এটা ভুল। যা আছে আমরা পরিষ্কার করবো।
ঢাকার ডেমরা থানা জামায়াতের আমির ছিলেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ডেমরা চিনিই না।
কবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং দলটির আদর্শ উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চাঁন বলেন, পরবর্তীতে আমরা বিস্তারিত জানাবো। এখন কিছুই বলতে চাচ্ছি না। আমি সবই আপনাদের বলবো।
জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিডিপি সভাপতি বলেন, ভুল কথা অনেকেই বলতে পারেন। এটা একটা নতুন দল। আমার সঙ্গে যারা আছেন তারা নতুন প্রজন্মের। বিভিন্নভাবে তাদের সংগ্রহ করছি। এখানে কারো কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি বা সহিযোগিতা ফিল করিনা। এখন কেউ যদি কিছু বলে আমরা এজন্য দায়ী নই।
তিনি আরও বলেন, বিনীতভাবে আপনাদের কাছে আবেদন, বিস্তারিতভাবে আমরা বলবো। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা দল। জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নাই।
জাতির পিতা, বাংলাদেশ সংবিধান মানেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান মেনেই আমরা রাজনীতিতে এসেছি। সংবিধানের প্রতিটি শব্দকেই আমরা সম্মান করি। এবং সেটাকে লালন করেই আমরা রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধু তো জাতির পিতা। বাংলাদেশের সংবিধানের বাইরে যেতে রাজী নই। আমাদের গঠনতন্ত্র দেখলে বুঝবেন। আর এখানে মুক্তিযুদ্ধে পর জন্ম নেওয়ার বিভিন্ন জায়গায় উদ্যোক্তা যারা আছেন, তাদের নিয়েই দল গঠন করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধী কেউ দলে আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিডিপি সভাপতি আরও বলেন, স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছে, যুদ্ধাপরাধী বানাইলে বানাইতে পারেন। আমরা এসব বিষয়ে যাবো কেন? আমরা একটা রাজনৈতিক দল। ইনশাআল্লাহ সামনে সব কিছু পরিষ্কার হবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, জামায়াতের কেউ যদি যুদ্ধাপরাধী না হন এবং তাদের গঠনতন্ত্র যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয়, তাহলে শর্ত পূরণ করে ভিন্ন নামে তাদের নিবন্ধন পেতে বাধা নেই।
বর্তমানে ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে মো. আলমগীর বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ নিবন্ধিত হতে চাইলে তাকে নতুন করে নিবন্ধিত হতে হবে।
এসময় তিনি স্পষ্ট করে জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক গঠনতন্ত্র নিয়ে কেউ আবেদন করলে তাদের নিবন্ধন দেবে না কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়ার সুযোগ নেই।
এর আগে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন আদালতের আদেশে বাতিল হয়েছে। তাই ওই দলের ব্যক্তিরা ভিন্ন নামে আবেদন করলেও নিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য আদালত কোনো আদেশ দিলে ভিন্ন কথা। সে আদেশ মানতে হবে।
আাগামী ২৯ অক্টোবর নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। তবে ওইদিন সরকারি ছুটি বিধায় ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নিবন্ধনের আগ্রহী দলগুলো আবেদন করতে পারবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ