সরকার বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপে সংলাপ করছে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দল ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির সঙ্গে পৃথক সংলাপে বসে দলটি।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সরকার পতনে যুগপৎ আন্দোলনে জাতীয় দল ও ইসলামিক পার্টি একমত বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, খুলনার সমাবেশ বানচাল করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। ধর্মঘট, হরতাল, কারফিউ কিছুই মানা হবে না। বিএনপির সমাবেশ ঠেকানো যাবে না। সব বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মী-সমর্থকরা খুলনায় জনসমাবেশে উপস্থিত হবেন। কোনো প্রতিবন্ধকতাই খুলনার বিভাগীয় সমাবেশের জনস্রোতকে রুখতে পারবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের দুই শরিক দলের সাথে বৈঠক শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ওই সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিকেল চারটায় জাতীয় দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্ব ১০ সদস্যর প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
অপরদিকে বিকাল পাঁচটায় সংলাপে অংশ নেয় বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি। ইসলামিক পার্টির সভাপতি আবু তাহের চৌধুরীর নেতৃত্বে ৮ সদস্যর প্রতিনিধিদল ওই সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সমাবেশে এতটুকু প্রভাব পড়বে না। ময়মনসিংহে একইভাবে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপরও আপনারা দেখেছেন কিভাবে মানুষ এসেছে। ট্রলারে করে, নৌকায় করে বিভিন্নভাবে। একইভাবে রিকশায় করে, রিকশাওয়ালারা মানুষজন নিয়ে এসেছেন তারা ভাড়া পর্যন্ত নেননি। এটাই হচ্ছে জনগনের অংশগ্রহণ। খুলনাতেও দেখবেন, ক্ষমতাসীনরা গাড়ি বন্ধ করুক আর যাই করুক গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেই ইনশাআল্লাহ। আমরা কোনো প্রতিবন্ধকতা, কোনো হরতাল-কারফিউও মানবো না, আমরা সমাবেশ উপস্থিত হবোই।
বিএনপির সভা সমাবেশে বাধা দেয়া হবে না প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ পর্যন্ত কোনো কথা কি আওয়ামী লীগ রেখেছে? রাখতে পারেনি। কারণ তারা বিশ্বাস করে যা বলব, তা করবো না। ঠিক উল্টোটা করে। সুতরাং আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
‘আওয়ামী লীগও রাজপথে নামবে’-এই রকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওখানে তো কোনো আপত্তি নাই। উনাদের সেই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, রাজপথে নামতেই পারেন। কিন্তু একই সঙ্গে সমস্ত বিরোধী দলকে তাদের সমস্ত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে -এটা সরকার হিসেবে তাদের দায়িত্ব।
‘বিএনপি আরেকটি ১/১১র দুঃস্বপ্ন দেখছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি দিবাস্বপ্ন দেখে না। আমরা স্বপ্ন দেখি একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার, সত্যিকার অর্থে একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই অনির্বাচিত, অবৈধ, ভোটের অধিকার হরণকারী, লুটেরা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আমরা একটি ঐক্যমতের সৃষ্টি করে আন্দোলনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সংলাপ করছি। প্রথম দফা শেষ করে দ্বিতীয় দফায় ইতোমধ্যে ১৪টি দলের সাথে আলোচনা শেষ করেছি। এর অংশ হিসেবে আজকে বাংলাদেশ জাতীয় দল ও বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির সাথে বসেছি। আজকের আলোচনায় যে দাবিগুলো উত্থাপন করেছি তা হলো- এই সংসদকে ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর নির্বাচনকালীন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, দাবিগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যেটা রয়েছে তা হলো আমাদের গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বেশি ত্যাগী নেতা খালেদা জিয়া। যাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে, তাকে মুক্তি দিতে হবে। একই সাথে বিরোধী দলীয় নেতাদের নামে যে মিথ্যে মামলা রয়েছে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এসব জিনিসের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। গত ১৫ বছর ধরে যে ভয়াবহ রকমের দুর্নীতি হয়েছে। সেই দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে। একই সাথে বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করছি।
উল্লেখ্য, আগামী ২২ অক্টোবর খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। ওই সমাবেশকে সামনে রেখে পরিবহন মালিক শ্রমিক সংগঠনগুলো ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনা থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ