বিশ্বে ৪০ মিনিট আগে বজ্রপাতের সর্তকবার্তা দিতে পারলেও বাংলাদেশে এখনও চালু হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুর রহমান। বলেছেন, বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে ১৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যা বর্তমানে পাশের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রকল্প পাস হলে ৪০ মিনিট আগে বাংলাদেশও আলি ওয়ানিং বা সর্তকবার্তা দিতে সক্ষম হবে। এতে মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারে। বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে বৃহস্পতিবারের আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
লিখিত বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাসে জনগণ ও সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১৩ অক্টোবর সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস’ উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘দুর্যোগে আগাম সতর্কবার্তা, সবার জন্য কার্যব্যবস্থা।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছর কোন না কোনো দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ব্যাপকতা প্রমাণ করে দুর্যোগের পূর্ব সতর্কীকরণ ও ঝুঁকিহ্রাসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান কৌশল হওয়া উচিত। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় জনগণের জন্য দুর্যোগ পূর্ব পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে আগাম সতর্কবার্তা উপকূলীয় সম্ভাব্য উপদ্রুত এলাকার জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে উপকূলে আমাদের ৭৬,১৪০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় অনুরূপ স্বেচ্ছাসেবক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
দুর্যোগঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তায় ১৯৭২ সালে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র চালু হয়। সারা দেশে বর্তমানে সাড়ে তিন’শ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে বন্যার আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হয়। আকস্মিক বন্যা মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে রিমোট সেনসিং, জিআইএস, রাডার, স্যাটেলাইট তথ্য-চিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে বন্যা আসার ৩ থেকে ৫ দিন আগেই বন্যার পূর্বাভাস ও বন্যার স্থায়িত্ব সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেয়া সম্ভব হয়েছে। BWDB এর FFWC থেকে Flood App এবং Flood Alert এর মাধ্যমে বন্যা পূর্বাভাসের সর্বশেষ তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন উন্নত গাণিতিক মডেল ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস ও সতর্কতাবার্তা প্রদান করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ‘ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র’ থেকে বর্তমানে গাণিতিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল ‘ডব্লিউআরএফ’ ব্যবহার করে ৭ থেকে ১০ দিনের পূর্বাভাস অনেক নির্ভুলভাবে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বজ্রপাতে প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে এবং দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে দেশের ৮টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেকটিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। তাছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে বজ্রপাতপ্রবণ ১৫টি জেলার ১৩৫ উপজেলায় ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া টর্নেডোর পূর্বাভাস বিষয়ে বর্তমান সরকার কার্যক্রম শুরু করেছে।
তিনি বলেন, পূর্বাভাস প্রদানের জন্য ২০১২ সাল থেকে SAARC Monsoon Initiative Programme চালু রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক খরা পর্যবেক্ষণ ও পূর্বসতর্কীকরণ পদ্ধতির উন্নতি সাধন করা হয়েছে, যাতে করে বাংলাদেশের কৃষক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যে কোনো খরা মোকাবেলায় আগাম কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আরও সময়োপযোগী ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে।
ড. এনামুর রহমান আরো বলেন, দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রচারে দুর্যোগের প্রাক্কালে রেডিও, টেলিভিশন ও মাইকিং-এর মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক দ্রুত ও অধিকতর কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে চালু করা হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে প্রায় ৩২টি কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগাম সতর্কবার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এইসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম সতর্কবার্তা প্রস্তুতি ও প্রচারে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সম্প্রতি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তিন দিনে আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস প্রচলন করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে বন্যার আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রচারের জন্য কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও জামালপুর জেলায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যার আগাম সতর্কবার্তা সকল পর্যায়ে প্রচার করার মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকিহ্রাসে মূখ্য ভূমিকা পালন করবে।দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সার্বিক সাফল্য অর্জনে স্থানীয় পর্যায়ে শক্তিশালী কাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে বিভাগ থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে শক্তিশালীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলি (এসওডি) এর আলোকে রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট টুল ব্যবহার করে দুর্যোগে ঝুঁকিহ্রাস, আপদকালীন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও মহড়ার মাধ্যমে এর কার্যকরী ব্যবহার ও হালনাগাদকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বুকলেট প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ