পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘গণতন্ত্র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের হয়। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের নেতা। ভারতবর্ষে আমরা যষ্ঠ শতাব্দীতে গণতন্ত্র চালু করেছি। আমরা ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছি, ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও দিয়েছে? আমরা এদেশে সংগ্রাম করেছি, যখন মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। যখন মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।’ গণতন্ত্র নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তাভাবনা আর বাংলাদেশের চিন্তাভাবনা এক হতে পারে না বলেও মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহর আসন্ন ঢাকা সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে না হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন না করতেও সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সরাসরি তাদের কাছে যেতে বলেছেন মন্ত্রী।
মোমেন বলেন, ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তির কারণে এখনও আমরা বিদেশি কিছু হলে পছন্দ করি। সে কারণে তাদের কাছে ধরনা দিই। এ অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ঢাকায় যে কর্মসূচিতেই তিনি যোগ দেন, সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন রাখেন আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। আর পিটার হাস তুলে ধরেন তার দেশের অবস্থান। সেদিন তিনি বলেছেন, ‘সহিংসতা বজায় থাকলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতের কাছে প্রশ্ন করার যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘আপনারাও ওনাকে দিয়ে জোর করে বলান। সে বেচারা (রাষ্ট্রদূত) বাধ্য হয় উত্তর দিতে। আপনারা বিদেশের কাছে ধরনা না দিলেই ভালো। আপনারা আমাদের কাছে আসুন। তাদের (বিদেশিদের) কাছে যান বলেই তারা বক্তব্য দেন।’
মোমেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমাদের দেশে যারা ডিপ্লোম্যাট আছেন তারা পরিপক্ব। তারা সম্মানিত লোক। তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবে বলে আমাদের বিশ্বাস। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের পরামর্শ সরকারের দরকার নেই।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিষয়টিও তুলে ধরেন মোমেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণহত্যার সময় কোথায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র? আমাদের অন্যরা কী শেখাবে? আমরা ফিলিস্তিনের বিষয়ে সোচ্চার। আমরা কোনো বড় শক্তির দেশ নই, তবে যেখানে অন্যায় হয় সেখানে আমরা সোচ্চার। এটা বাংলাদেশ। অন্যরা এসে আমাকে কথা শেখাবে? যখন এদেশে গণহত্যা হচ্ছিল, তখন তারা ধারে কাছেও আসেনি। মিয়ানমারে যখন গণহত্যা হচ্ছিল তখন ওই লোকগুলোকে কেউ আশ্রয় দেয়নি। কে এটা করেছে? এটা বাংলাদেশ করেছে। শেখ হাসিনা সীমান্ত খুলে দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষা করেছেন।’
দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশিদের কাছে প্রশ্ন রাখার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে কূটনীতিক থাকার সময় দেখেননি বলেও জানান মোমেন। বলেন, ‘আমি ৩৮ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। প্রফেসরি করেছি। সে সময় বিভিন্ন ইস্যুতে সে দেশের মিডিয়া আমার কাছে আসত। কিন্তু যখন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়েছি, তখন সে দেশের কাউয়াও আমার কাছে আসেনি। কারণ, তারা তাদের বিষয়ে বিদেশিদের পরামর্শ নেয় না।’
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে সে দেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়ে মোমেন বলেন, ‘আপনারা তাদের (যুক্তরাষ্ট্রকে) জিজ্ঞেস করুন তাদের দেশে এত অল্প লোক কেন ভোট দেয়? সেখানে ২৩ থেকে ২৭ শতাংশ ভোট দেয়, আমার এখানে তো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোক ভোট দেয়। সব দেশের গণতন্ত্রে ভালো-মন্দ আছে। এটা সবসময় পারফেক্ট নয়। এটা একটা প্রসেস। প্রচেষ্টার মাধ্যমে গণতন্ত্র পরিপক্ব হয়। আমাদেরও দুর্বলতা আছে। কীভাবে দুর্বলতা সমাধানে কাজ করা যায়, আমরা চেষ্টা করছি। এটার মানে এ নয় যে ওনাদেরটা সবচেয়ে ভালো। তাদেরও দুর্বলতা আছে, সমস্যা আছে।’
নয়াশতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ