ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২২

‘সকল ধর্মে কন্যাশিশুর সম্পদ বণ্টনে ন্যায্যতা থাকা উচিৎ’

প্রকাশনার সময়: ১১ অক্টোবর ২০২২, ১৯:০৯

সকল ধর্মে কন্যাশিশুর জন্য সম্পদ বণ্টনে ন্যায্যতা সুরক্ষা করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। বলেন, কন্যাশিশুর সুরক্ষার ক্ষেত্রে আইনের যেমন প্রয়োজন তেমনি জনসচেতনতাও বিশেষ প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে জনসচেতনতায় আরো মনোযোগ প্রয়োজন।

মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) এফডিসিতে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম যৌথভাবে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যে কোন জাতীয় সমস্যা সমাধানে আইনের প্রয়োজন আছে। তবে আইনই সব সমস্যার সমাধান নয়, আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন করতে হবে। সকল ধর্মে কন্যাশিশুর জন্য সম্পদ বণ্টনে ন্যায্যতা সুরক্ষা করা উচিৎ। আমাদের দেশে ডিএনএ ল্যাব আছে, ফরেনসিক ল্যাব আছে, যা পৃথিবীর অনেক দেশে নাই। কন্যাশিশুর সুরক্ষার জন্য সর্বক্ষেত্রে সরকার ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য কন্যাশিশুদের স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, কন্যাশিশুরদের পাশাপাশি সমাজে ছেলে শিশুরাও সেক্সচুয়াল হ্যারাজ হয় কিন্তু সমাজে তার বিরূপ প্রতিফলন কন্যাশিশুদের মতো তীব্র হয় না। তাই কন্যাশিশুর সুরক্ষার দায়িত্ব সমাজের সর্বস্তরের শ্রেণি পেশার মানুষের।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বাংলাদেশের ১৮ শতাংশ মেয়ের ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হয়। বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোরীদের ৩১ শতাংশই গর্ভবতী হন। যারা শারিরিক ও মানসিকভাবে সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত নয়। ৪৩ শতাংশ কিশোরী মা গর্ভজনিত সমস্যার কারণে মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকে। বিশ্বে প্রতি ৭ সেকেন্ডে ১৫ বছরের কম বয়সী একটি কন্যাশিশুর বিয়ে হচ্ছে। আফগানিস্তান, ইয়েমেন ও সোমালিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে অল্প বয়সী কন্যাশিশুদের সাথে বেশী বয়সী পুরুষদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা খুবই বেশী।

ইউনিসেফের তথ্যমতে বর্তমান বিশ্বে ৭০ কোটি মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার। এই ধারা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের শিকার কন্যাশিশুর সংখ্যা ৯৫ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের শিকার মেয়েদের ২০ শতাংশ ২৪ বছর বয়সের মধ্যেই ২ বা তার অধিক সন্তানের মা হচ্ছে। ফলে প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অশিক্ষা, দারিদ্র্য, কুসংস্কার, বখাটেদের উৎপাত ও অসচেতনতাকে দায়ী করা যেতে পারে। মেয়েদের একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যদি টেকনিক্যাল শিক্ষা দেয়া যায়, তাহলে তারা নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু আয় করতে পারবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ড্রপ আউট কন্যাশিশুদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি চাহিদা পুরণ করা উচিত। তখন হয়তো বাল্যবিবাহ অনেকাংশে কমে আসবে। তবে বাল্যবিবাহ শুধু বন্ধ করলেই চলবে না, বাল্যবিবাহ ঠেকানো মেয়েটি পরবর্তীতে কেমন আছে? বিয়েটি কেন হচ্ছিলো? মেয়েটির অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা কেমন? সে কি তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারছে ? অন্যদিকে যে মেয়েটির বাল্য বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সেই মেয়েটি কেমন আছে? তার শারিরিক মানসিক স্বাস্থের অবস্থা কী রকম। এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে বাল্যবিবাহের শিকার সেই মেয়েগুলোর সুরক্ষায় কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের সিনিয়র ডিরেক্টর চন্দন জেড গোমেজ ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক সাকিলা জেসমিন ও সাবেক বিতার্কিক কৃষিবিদ ফালগুনী মজুমদার।

প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশকে পরাজিত করে সরকারি দল প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি, ক্রেষ্ট, নগদ অর্থসহ সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল- ‘আইনের প্রয়োগ নয়, জনসচেতনতাই পারে কন্যাশিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে’।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ