ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি লালপুরে ময়না যুদ্ধে শহীদরা

প্রকাশনার সময়: ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১৪:২০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৫:১২
0

নাটোর প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক ময়না যুদ্ধ দিবস আজ ৩০ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গিয়ে প্রায় ৩৫ জন বাঙালি শহীদ হন। পাক বাহিনীর ২৫ রেজিমেন্ট ধ্বংস করে মুক্তি পাগল জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনী।

পাক বাহিনীর ২৫ রেজিমেন্টের প্রধান মেজর জেনারেল আসলাম হোসেন খান ওরফে রাজা খান জনতার হাতে ধরা পড়েন। পরদিন ৩১ মার্চ লালপুর শ্রীসুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তবে আজও নাটোরের প্রথম ওই প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী তিনটি জিপ ও ছয়টি ট্রাক নিয়ে পাবনার নগরবাড়ি থেকে নাটোর হয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে পাবনার দাশুড়িয়া ও রাজাপুরে মুক্তি পাগল জনতার বাধার মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পাক বাহিনীর একটি দল কাচা রাস্তা দিয়ে লালপুর উপজেলার ওয়ালীয়া এলাকার ময়না গ্রামে ঢুকে বেপরোয়া গুলি চালিয়ে প্রায় ৩৫ বাঙালিকে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্ধুদ্ধ বাঙালিরা আরও সংগঠিত হয়ে চারদিক থেকে ধাওয়া করে পাক সেনাদের। তীর ফালা সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাঁওতালরাও অংশ নেয় যুদ্ধে। মুক্তি পাগল জনতার ধাওয়া খেয়ে জেনারেল টিক্কা খানের ভাগনে মেজর রাজা আসলামসহ তিনজন পাক সেনা আশ্রয় নেন প্রত্যন্ত ময়না গ্রামের নওয়াব আলী মোল্লা ও সৈয়দ আলী মোল্লার বাড়িতে। স্থাানীয় জনতা, ইপিআর ও আনসার বাহিনীর সঙ্গে পাক বাহিনীর লড়াইয়ের পর ধরা পড়েন রাজা আসলামসহ তিন পাক সেনা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হত্যা করে স্থানীয় ভাগারে মরদেহ ফেলে দেন।

ঐতিহাসিক এই দিনটিকে স্মরণে রাখতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ময়না গ্রামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকার মানুষ তাদের শহীদ স্বজনদের স্মৃতি স্মরণ করতে ছুটে আসে এখানে।

৩০ মার্চ শহীদরা হলেন- ময়না গ্রামের সৈয়দ আলী মোল্লা, শিক মসলেম মোল্লা, আবুল কাশেম, আয়েজ উদ্দিন, খন্দকার নুর নবী মন্টু, নান্দো গ্রামের কিয়ামত আলী শেখ, ওয়ালিয়ার বক্স সরদার, করম আলী, পানঘাটা গ্রামের আবেদন আলী, ডা. নাদের হোসেন, খোরশেদ সরদার, ধুপইল গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, টিটিয়ার আস কুদ্দুস, কালু মিয়া, বামন গ্রামের সেকেন্দার আলী, বিজয়পুর গ্রামের আছেন উদ্দিন, ভবানীপুরের জয়নাল আবেদীন, চেরু প্রামানিক, চাঁদপুরের আয়ুব আলী, দুয়ারিয়ার ভবেশ চন্দ্র বিশ্বাস এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নাম না জানা আরও অন্তত ১৫ জন।

স্বাধীনতার পর শহীদদের স্মরণে এখানে স্থানীয়ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ৫০ বছরেও ময়না যুদ্ধে শহীদদের সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি। এখনও শহীদ পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা।

উপজেলার ৭নং ওয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা প্রতি বছরই এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর স্বল্প পরিসরে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।

লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসাহাক আলী জানান, প্রতি বছর এ দিবস উপলক্ষে ময়না শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। তবে এ বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শুধু পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, শহীদদের স্মরণে ওই স্থানে সরকারিভাবে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ