ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চাকা ঘোরে খেয়াল-খুশিতে!

প্রকাশনার সময়: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:১১

যানজটমুক্ত নগর ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীতে বাস ফ্র্যাঞ্চাইজি চালু করে সরকার। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে লাল-সবুজ রঙের বাস সার্ভিসের যাত্রা শুরু করা হয়। শুরুতে বাস সংকট থাকলেও কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানামা না করা এবং টিকিট ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট ভাড়া আদায়ে প্রথম কয়েক মাস আস্থার জায়গা অর্জন করে সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘ঢাকা নগর পরিবহন’।

কিন্তু এক বছর না পেরোতেই শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। বরং উল্টো চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে ঢাকার বাস যাত্রীদের আশার প্রতীক হয়ে ওঠা নগর পরিবহন। বিনা টিকিটে যেখানে সেখানে থেকে যাত্রী ওঠানামা করা, বাসচালক ও চালকের সহকারীর খেয়ালখুশিতে বাস ছাড়া, কাউন্টারে থাকা কর্মীদের খারাপ ব্যবহারসহ আরও অনেক অভিযোগেই চাকা ঘুরছে ঢাকা নগর পরিবহনের।

যাত্রীরা বলছেন, শুরুতে নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া যাত্রী ওঠানামা বন্ধ রাখার বিষয়টি ছিল সাধুবাদ পাওয়ার মতো। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই পরিবহন ব্যবস্থা নড়ভড়ে হয়ে পড়েছে। এখানে চালকরা তাদের খেয়াল-খুশি মতো বাস ছাড়েন। এভাবে তো একটি পরিবহন চলতে পারে না। তাদের খেয়াল খুশিতে কোনো জবাবদিহি নেই।

কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি মুখ ভেঙ্গিয়ে কথা বলেন। কখন বাস ছাড়বে সেটিও তারা বলতে পারেন না। যেন মনে হয় অন্য কোনো পরিবহনের নতুন কাউন্টার মাস্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। এরপর বাসচালক তাদের খুশিমতো চা, বিস্কুট, সিগারেট খেয়ে তারপর গাড়িতে ওঠেন।

মোহাম্মদপুর তিন রাস্তা মোড় কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা সিহাব মোল্লা নামের এক শিক্ষার্থী নয়া শতাব্দীকে বলেন, টিকিটের টাকার পরিমাণ বেশি। তবুও টিকিট কেটে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি, বাসের দেখা নেই। কাউন্টার মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলাম বাস কখন আসবে? উত্তরে তিনি বললেন, জানেন না! একজন কাউন্টার মাস্টার যখন বাস আসার কথা বলতে না পারেন, তাহলে যাত্রীরা কীভাবে পরিবহন সেবা নেবে।

তিনি বলেন, এর আগে একদিন কলেজে যাওয়ার জন্য বাসে উঠলাম। দেরি করে বাস এলো। বাসের চালক বাস থেকে নেমে সিগারেট খেয়ে গল্প করে বাসে উঠলেন। এরপর মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডি-১৫ নাম্বার পৌঁছাতেই রাস্তার মাঝে থেকে বিনা টিকিটে ৪-৫ জন যাত্রী তুললেন। এ নিয়ে যাত্রীরা কথা বললেও চালক ও চালকের সহকারী চুপ করে থাকলেন, কিছু বললেন না।

সিটি কলেজের যাত্রী মৌমিতা নামে আরেকজন বলেন, বাস চালু হওয়ার পর আমি ও আমার সহকর্মীরা সিটি কলেজে আসতাম। তখন বাসের সার্ভিস খুব ভালো ছিল। কিন্তু কয়েক মাস বাসটির সেবা নিচে নেমে এসেছে। সময়মতো ছাড়ে না, টিকিট কেটে বসে থাকতে হয়, মাঝপথে যাত্রী তোলে। বাস চালকদের এমন কর্মকাণ্ডে আমার সহকর্মীরা আর এই বাসে যাতায়াত করে না। অন্য পরিবহনে কম টাকায় যাতায়াত করে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আমিও অন্যবাসে এখন পরিবহন সেবা নিচ্ছি। সোমবার বাস কম দেখে মন চাইলো নগর পরিবহন যাই।

মৌমিতা শুধু একা নন। এই বাসে যাতায়াতকারীরা প্রতিদিনই দেরি বিড়ম্বনায় পড়ছেন। ফলে বেশির ভাগ সময় তারা জরুরি কাজে বের হলেও গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অর্ধশত বাস নিয়ে এই সার্ভিস চালু হলেও বাসের সংখ্যা দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

এরমধ্যে আবার বাস চালকদের খেয়াল-খুশিমতো যখন তখন বাস ছাড়ায় যাত্রীদের আস্থা আরও কমতে শুরু করেছে। সবসময় বাসগুলো দেরিতে ছাড়ার কারণে জরুরি কাজে বের হওয়া যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিয়ে অন্য বাহনে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কারও যেন মাথাব্যথা নেই। যদিও এই বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রী বেড়েছে এবং আগামীতে আরও বাস নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, আমাদের কাছে এমন সব অভিযোগ এসেছে। আমরা বিষয়গুলো যাচাই করার জন্য খুব শিগগিরই মাঠে নামব। আমরা যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুতে পরিকল্পনা মোতাবেক যথাযথ মনিটরিংয়ের ফলে নিয়ম স্থির ছিল। তবে বর্তমানে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং ব্যবস্থা অনেকটা দুর্বল থাকায় বাসচালক ও চালকের সহকারীরা সহজেই যাত্রী তুলতে দ্বিধাবোধ করছেন না। অতি মুনাফার আশায় তারা নিয়ম ভুলে গিয়েছে।

যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার চেয়ে মুনাফাকেই তারা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে পরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরার চেয়ে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। মাঠপর্যায়ে যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে সামনের দিকে পরিবহনে শৃঙ্খলা আরও ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ