ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

তিন ঘণ্টায় ৮৫ মি.মি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেলো ঢাকার বহু এলাকা

প্রকাশনার সময়: ০১ জুন ২০২১, ১৫:২৭
ঢাকার মিরপুরের একটি সড়ক: ছবি সংগ্রহীত

ঢাকায় আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, ধীরে ধীরে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগামীকালও ঢাকা অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কয়েক ঘণ্টার এই বৃষ্টির পানিতে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ সড়কই তলিয়ে যাওয়ায় সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষকে ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক সড়কে কোমর সমান পানির কারণে যান চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সহ দেশের নানা জায়গায় গত রাত থেকে অল্প ও ভারী বর্ষণ হয়েছে।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ ১০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে চট্টগ্রাম অন্যদিকে ঢাকায় সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এর বাইরে নেত্রকোনায় ৯৭ মিলিমিটার ও ময়মনসিংহে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আর আজ ভোর ছয়টার আগের চব্বিশ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছিলো ২১ মিলিমিটার। মূলত সোমবার মধ্যরাত থেকেই ঢাকায় বৃষ্টি শুরু হয়ে তা সকাল নয়টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

আবার এর মধ্যেই ছয়টার পর প্রবল বৃষ্টিতে শহর জুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং অনেক জায়গায় হাঁটু সমান কিংবা তারও বেশি পানিতে সয়লাব হয়ে যায় রাস্তাঘাট।

অবিরাম বৃষ্টিতে বিশেষ করে মিরপুর, ধানমন্ডি, রাজারবাগসহ অনেক এলাকা ও অলিগলি রাস্তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

মিরপুর থেকে গুলশান আসছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা বদরুল হক অনু। তিনি বলেন, মিরপুর ১০ নম্বরসহ তার আসার পথে প্রায় সর্বত্র রাস্তা পানিতে ডুবে ছিলো। মিরপুর দুই থেকে ১৪ নম্বর পর্যন্ত খুবই খারাপ অবস্থা। অনেক গাড়ী নষ্ট হয়ে রাস্তায় আটকে ছিল। পানিতে রাস্তা ডুবে ছিল। অল্প কিছুদিন আগে ড্রেনের কাজ হয়েছে মিরপুর এলাকায়। সব মিলিয়ে আজ একেবারে বাজে অবস্থা হয়েছে। এমনকি বনানীতে ঢোকার মুখে ও নৌবাহিনীর সদর দফতরের সামনের সড়ক পানিতে টইটুম্বুর ছিলো। ওদিকে ঢাকার আশেপাশের এলাকাতেও অনেক জায়গায় প্রচণ্ড জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

সাভার ইপিজেড এলাকায় মূল সড়ক কয়েক কিলোমিটার এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে ছিলো। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সকালেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরী চলাচল। লালমাটিয়ায় বসবাস করেন সানজিদা খান। বেলা বারটার দিকে তিনি বলছেন, "চারদিকে পানি আর পানি, অফিসে যেতে হবে কিন্তু বের হতে পারছি না"।

এর আগে ২০১৭ সালের অগাস্টে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে শহরজুড়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিলো। তখন একদিনে ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতি হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ স্বল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছিলেন। কিন্তু আজ সকালের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার ছবিতে সয়লাব হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে দু বছর পরেও কেন পরিস্থিতির কোন উন্নতি হলো না তা নিয়ে ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের কেউ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।

যদিও গত বছরের ডিসেম্বরে জলাবদ্ধতার সাথে জড়িত বেশ কিছু খালের দায়িত্ব ওয়াসার কাছ থেকে সিটি কর্পোরেশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এরপর কয়েকটি খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করার খবরও দিয়েছিলো সিটি কর্পোরেশন থেকে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশে প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাাদক ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন যে, "ঢাকার যে অবস্থা তাতে অতিবৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হবে না-এ ধারণাটাই বরং ভুল। ভুল পরিকল্পনার পাশাপাশি জলাধার জলাশয় সব শেষ করে দেয়া হয়েছে। এখন যতই প্রাতিষ্ঠানিক কাজ চলুক না কেন হঠাৎ এত বৃষ্টি হলে তা সামাল দেয়া বর্তমান ড্রেনেজ সিস্টেমের পক্ষে অসম্ভব"। তিনি বলেন মাত্র কিছু দিন আগে কয়েকটি খাল পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন কিন্তু সেটি এই পরিমাণ বৃষ্টির জন্য যথেষ্ট হবে না।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ