সুলভ মূল্যে গাড়ি ক্রয় ও রেন্ট-এ-কার ব্যবসার আড়ালে ভয়ংকর প্রতারণার দায়ে মূল হোতা জাকির চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগ। তিনি একই রেজিস্ট্রিশন নম্বর সম্বলিত গাড়ি একাধিক ব্যক্তির নিকট জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রয় করে হাজার কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। গ্রেফতারকৃত মোঃ জাকির হোসেন (৪৩) কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানাধীন ২নং মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ।

এরআগে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম। এসময় তার হেফাজত হতে ২টি মাইক্রো বাস উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ০৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মুগদা থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু হয়। মামলাটি গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগ ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তকালে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জাকির চেয়ারম্যান পোর্ট থেকে স্বল্প দামে গাড়ি ক্রয় করে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেয় এবং ক্রয়কৃত গাড়ি রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনা করার জন্য চুক্তি করে। সে একই গাড়ির বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির সাথে ভুয়া কাগজপত্র দ্বারা চুক্তি সম্পাদন করে।

তাছাড়া একই রেজিস্ট্রিশন নম্বর সম্বলিত গাড়ি একাধিক ব্যক্তির নিকট জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রয় করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর দিয়ে গাড়ি বিক্রির চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে এবং গাড়িটি নিজেই ভাড়া নিয়ে মাসিক ভাড়া পরিশোধের ভিত্তিতে পরিচালনা করার কথা বলে কিছুদিন ভাড়া পরিশোধ করে। পরবর্তীতে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেয় ও গাড়ি ক্রয়ের অর্থ আত্মসাৎ করে। এছাড়াও পূর্বের বিক্রয়কৃত গাড়ি স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ।

তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্যদের নিকট থেকেও গাড়ি ক্রয় ও রেন্ট-এ কারের ব্যবসার কথা বলে টাকা নিয়েছে এবং তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে তার প্রতারণার কাজ চালিয়ে গেছেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, গ্রেফতারকৃত জাকির চেয়ারম্যান প্রতারিত ভিকটিমদের কাছ থেকে পুরো টাকা নিয়ে সে ডাউন পেমেন্টে গাড়ি কিনতো। আবার ব্যাংক থেকে গাড়ির বিপরীতে কাস্টমারকে না জানিয়ে ব্যাংক লোন সুবিধা নিতো। দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ৩০০ ভিকটিমের সাথে সে এরূপ প্রতারণা করে প্রায় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে এবং এই প্রতারণার টাকা দিয়ে সে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছে। গ্রেফতারকৃত মোঃ জাকির হোসেন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রতারণার মামলা রুজু হয়েছে বলেও বানান তিনি।

অধিক মুনাফা লাভের আশায় লোভের বশবর্তী হয়ে এধরণের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করেন ডিবি প্রধান।

নয়া শতাব্দী/জেআই