রাজনীতির সমাধান একমাত্র রাজপথে হবে বলে জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা। সরকারবিরোধী সমমনা দলগুলোর নেতারা বলছেন, দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। তবে দুর্নীতিবাজ ও জালিম এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠেছে। তাই সরকার পতন- এই লক্ষ্যে সব দল ও মতকে এক হতে হবে। কাউকে মাইনাস নয় বরং সবাইকে নিয়ে রাজপথে বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজপথের লড়াইয়ে এবার বিজয় হবে জনগণেরই।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) অঙ্গ সংগঠন যুব জাগপার ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘দেশের স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন জোটের শীর্ষ নেতারা। ১৯৯০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জাগপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম শফিউল আলম প্রধান সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম (বীর বিক্রম) বলেন, গত ১৪ বছর ধরে সরকারবিরোধীরা ভেবেচিন্তে কাজ করেনি। বিরোধী জোট করিয়া ভেবেছে, ভেবে করেনি। গণতন্ত্রকামী দলগুলোকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কী করা প্রয়োজন সেটি চিন্তা করা এবং চিন্তার স্থান ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হুটহাট সিদ্ধান্তে কখনো সফলতা আসে না। তাই কাউকে বাদ দিয়ে এ আন্দোলন সংগ্রাম সফল হবে না। আগ্রহী সবার সঙ্গে মতবিনিময় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আর ২২ সালের সরকার কিন্তু এক না। গত ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় তাদের প্রয়োজনে সব উপাদানকে কুক্ষিগত ও সুসংহত করেছে। তাই সরকার পতনের জন্য দরকার সুপরিকল্পনা। কাউকে মাইনাস নয় বরং সব দল ও মতের সঙ্গে সমন্বয় করে এ আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে।
সৈয়দ ইবরাহীম আরো বলেন, রাজনীতিতে আমরা গৃহপালিত বিরোধী দল ও জাতীয় বেইমান চাই না। আমরা কোনো প্রতিবেশী দেশের সিদ্ধান্ত মানতে চাই না। বর্তমান সরকার প্রতিবেশী দেশের ওপর নির্ভরশীল। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা এশিয়া, আমেরিকা বা ইউরোপ পালামেন্টের সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা জনগণের সিদ্ধান্তে চলতে চাই। তাই সরকার পরিবর্তনের জন্য বৃহত্তরআন্দোলন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আমরা এখনো অরক্ষিত স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৈৗমত্ব, গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। দেশের জনগণও একদলীয় শাসকের হাত থেকে মুক্তি চায়। তাই রাজপথের বিরোধী দল, সংসদের বিরোধী দলসহ সমমনা সবাইকে সরকার পতনের আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ আমাদের সবার লক্ষ্যই- সরকার পতন। আমাদের লড়াই জালিম সরকারের বিরুদ্ধে, আওয়ামী প্রশাসনের বিরুদ্ধে। হামলা-মামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও গুলি করে আন্দোলন দমানো যাবে না।
তিনি আরো বলেন, দল নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব না। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে ২০১৪-২০১৮ সালের মতোই নির্বাচন হবে। তাই আমরা নিয়মতান্ত্রিক যুগপৎ আন্দোলনে বিশ্বাসী। আগামীতে ধারাবাহিক কর্মসুচির মধ্যে দিয়ে আন্দোলন বেগমান করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে একটি নীতিগত আর্দশে সব দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সভায় জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, স্বাধীনতা ৫১ বছরেও আমরা গ্লানি বহন করতে হচ্ছে। একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারত যেভাবে বরণ করল, তা লজ্জাজনক। আজকে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে, মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনও একতরফা করা পায়তারা করা হচ্ছে। তবে তা হতে দেয়া হবে না। তাই জাতীয়তাবাদী ও ইসলামি মুল্যবোধের সকল শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। যেখানেই হামলা হবে সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই জালিম সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকতে হবে।
সভাপতির বক্তব্য জাগপার সভাপতি ব্যারিস্টার তাসনিয়া প্রধান বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছরেও এসে আমাদের বলতে হচ্ছে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। এটা দুর্ভাগ্য। তাহলে এত বছরে আমাদের প্রাপ্তি কি? পরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বললেন আগামীতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আনতে হবে। তাহলে কি বাংলাদেশ সংবিধান থেকে সার্বভৌমত্ব উঠে গেছে?
তিনি বলেন, দেশের চলমান সংকট মোকাবেলা করে রাষ্ট্রকে আবারো গণতান্ত্রিক রূপে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই আসুন সকল বিভেদ ভুলে একটি আর্দশে সবাই বড় আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামি। বাঁচা মরার লড়াইয়ে বিজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না জাগপা’র নেতৃবৃন্দ বলেও জানান এই সভাপতি।
জাগপার সহ-সভাপতি ও রাজনৈতিক মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, এখন দেশের জনগণ আর ভোট দিতে পারে না। ভোট হয় নিশি রাতে। ক্ষমতায় থাকার জন্য পরাষ্ট্রমন্ত্রীর পর এবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই ভারতে কাছে ধরণা দিতে গেছেন। তবে আপনার পতন আসন্ন। রাজপথে নেমেছে এসেছে যুব সমাজ। সরকার পতনে আন্দোলনে আজকে সবাই এক্যবদ্ধ।
সমাপনী বক্তব্য সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, দেশের সকল সংকট মোকাবেলা করে গণতান্ত্রিক সাজে দেশকে গড়ে তুলতে যুব জাগপা অঙ্গীকারবদ্ধ। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে যুব সমাজ।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন যুব জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. সিরাজুল ইসলাম সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এরপর সংগঠনের নেতাকর্মী শফিউল আলম প্রধানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত করেন।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ