ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ৭ চুক্তি-সমঝোতা হতে পারে

প্রকাশনার সময়: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:২৭

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৭ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মোমেন জানান, ভারত সফরে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব চুক্তি-সমঝোতা স্মারক পানি ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার, প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত। অনুষ্ঠান শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবেন।

ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশগ্রহণ করবেন। ৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তিনি রাজঘাট গান্ধী সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। এরপর দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউজে। বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বৈঠকে দু’দেশের পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি যেমন- দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ জ্বালানী খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ বা বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের সফরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ হয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ দেওয়া হবে। উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক বা স্নাতকোত্তর এ দুটি পর্যায়ে স্কলারশিপ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থেকে শহীদ ও আহত ভারতীয় সেনাসদস্যদের পরিবারের মাঝে এ স্কলারশিপ নিজ হাতে তুলে দেবেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতীয় সেনাসদস্যদের মহান আত্মত্যাগকে যথাযথ সম্মানের সাথে স্মরণ করা হবে।

ড. মোমেন বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশের একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল ভারত সফর করবে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারত ও বাংলাদেশের মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ইভেন্টে উপস্থিত থাকবেন। বিজনেস ইভেন্টের মাধ্যমে যেমন বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা যাবে, তেমনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে। বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমানা ও সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ সারাবিশ্বের সামনে সহযোগিতার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয় যেমন নিরাপত্তা ইস্যু, আন্তঃসংযোগ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জনযোগাযোগ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক, আন্তঃদেশীয় বাস চলাচল, রেল ও নৌপথে যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সর্বশেষ ভারত সফর করেন। পরবর্তীতে কোভিড মহামারির ফলে বিগত ২০২০ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চ্যুয়াল সামিটে অংশগ্রহণ করেন। ২০২১ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ডিসেম্বর মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী এবং ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সফর করেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা অর্জন করা যাবে বলে প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে।

এই সফর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ও বিদ্যমান গতিশীল সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা যায়। পরিশেষে, চলমান কোভিড মহামারি, ইউক্রেন সংকট এবং বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে উক্ত সফর দু’দেশের পারস্পরিক সমঝোতা ও সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম/নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে প্রতীয়মান হয়।

ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে আমি সহ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রী, রেলপথ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ ও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে এ সফরে যোগদান করবেন।

তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, এর বাইরে আরও কয়েকটি সমঝোতা হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর দিল্লি সফর করবেন।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ